খবরের শিরোনামে আবারও অ্যাসাঞ্জ

২০১১ সালের জুনে আইসল্যান্ডের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অগমুনদুর জোনাসন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এক জরুরি বার্তা পান। এতে লেখা ছিল, ‘আইসল্যান্ড সরকারের তথ্যভান্ডারে হ্যাকারদের হামলা অত্যাসন্ন। তাই বিষয়টি তদন্তে মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই দেশটিতে এজেন্ট পাঠাবে।’

হ্যাকারদের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে এই জরুরি বার্তা পাওয়ার বিষয়টি জোনাসন বলেছিলেন নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে।

সাক্ষাৎকারে জোনাসন বলেন, ওই বছরের আগস্টে যখন এফবিআইয়ের আট বা নয়জনের একটি দল আইসল্যান্ডে এলে তিনি দেখেন, তারা ওই হামলা নিয়ে কোনো তদন্ত না করে উইকিলিকসের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করেছে।

তিন বছর ধরে লাখ লাখ গোপন মার্কিন কূটনৈতিক ও সামরিক নথি ফাঁস করা উইকিলিকসের অনেক কর্মী রয়েছেন আইসল্যান্ডে।

আইসল্যান্ড সফরের সঠিক উদ্দেশ্য না প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে মন্ত্রী জোনাসন পরবর্তী সময়ে এফবিআই প্রতিনিধিদলকে সে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ জানান। দলটির এ অভিযান ছিল আসলে উইকিলিকস ও এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ সম্পর্কে বিস্তৃত এক তদন্তেরই অংশ।

উইকিলিকস প্রথম ২০১০ সালে ওই সব গোপন নথি ফাঁস করা শুরু করে। উইকিলিকসের কাছে তথ্য সরবরাহ করার অভিযোগে সাবেক মার্কিন সেনা ব্র্যাডলি ম্যানিংকে গ্রেপ্তারের ছয় মাস পর ২০১০ সালের অন্তত অক্টোবর মাস থেকে এফবিআই চুপিসারে উইকিলিকস ও অ্যাসাঞ্জের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেনের ‘সহযোগী’ হিসেবে চলতি সপ্তাহে খবরের শিরোনামে পুনরাবির্ভাব ঘটেছে অ্যাসাঞ্জের। এর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন প্রায় ‘ভুলে যাওয়া’ মানুষ। বিশ্বব্যাপী মানুষের ফোনালাপ ও অনলাইন তৎপরতার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নজরদারির খবর ফাঁস করে স্নোডেন তাঁর পূর্বসূরি অ্যাসাঞ্জের মতোই হইচই ফেলে দিয়েছেন।

তহবিলসংকট এবং কথিত অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা চলে যাওয়ায় সম্প্রতি গোপন তথ্য প্রকাশে উইকিলিকসের বড় ধরনের তৎপরতা নজরে পড়ছে না। তা ছাড়া অ্যাসাঞ্জ নিজেও সুইডেনে প্রত্যর্পণ এড়াতে লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে ‘স্বেচ্ছাবন্দী’ জীবন যাপন করছেন।

তবে উইকিলিকস বা এর প্রতিষ্ঠাতা যতই লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকুন না কেন, যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ভুলে যায়নি। উইকিলিকসের ব্যাপারে তদন্তে নিয়োজিত সরকারি এজেন্ট, কৌঁসুলি ও অন্যান্য সূত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকার এবং আদালতের নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আভাস মেলে, উইকিলিকস ও অ্যাসাঞ্জের ওপর কিছু মার্কিন সরকারি সংস্থার পাশাপাশি আদালতের জুরিও নজরদারি রেখে চলেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উইকিলিকসের কয়েকজন সাবেক সদস্য জানান, উইকিলিকস ও অ্যাসাঞ্জের ব্যাপারে হাজার হাজার পৃষ্ঠার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহে উইকিলিকসের অন্তত আরও চার সাবেক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

নিউইয়র্ক টাইমস ও অন্যদের সাম্প্রতিক প্রশ্নের জবাবেও মার্কিন বিচার বিভাগের একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেন, উইকিলিকসের বিষয়াদি নিয়ে তদন্ত চালানো হয়েছে এবং এই তদন্ত এখনো চলছে। আইএইচটি।