'প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে হেরেছে বিজেপি'

অখিলেশ যাদব
অখিলেশ যাদব

ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের দুটি লোকসভা আসনে হেরেছে কেন্দ্রের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। গোরখপুর আসনে তিন দশক পর হারের স্বাদ পেয়েছে বিজেপি। ২০১৪ সালে ফুলপুর আসন প্রথমবার বিজেপির দখলে এলেও এবার হাতছাড়া হয়েছে।

অন্যদিকে বিহারে লোকসভার একটি ও বিধানসভার দুটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছে। আরারিয়া লোকসভা কেন্দ্র ও বিধানসভার জেহানাবাদ আসনে জয় পেয়েছে লালুপ্রসাদ যাদবের দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)। বিধানসভার ভাবুয়া আসনে সান্ত্বনার জয় পেয়েছে বিজেপি।

সব মিলিয়ে বুধবার দিনটি ভালো যায়নি বিজেপির। হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, উত্তর প্রদেশে হার বিজেপির জন্য সবচেয়ে অস্বস্তিকর। কারণ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের আসন ছিল এটি। এ আসন হারিয়ে যে বার্তা পেল বিজেপি, তা খুব একটা সুখবর নয়। তবে হার মেনে নিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। তিনি বলেন, ‘এটি একটি অভাবিত রায়। কিন্তু আমরা মানুষের দেওয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি এবং অবশ্যই নিজেদের ভুলভ্রান্তি নিয়ে কাজ করব আমরা।’

সমাজবাদী পার্টির (এসপি) নেতা অখিলেশ যাদব বলেছেন, জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় হারতে হয়েছে বিজেপিকে। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, উত্তর প্রদেশের দুটি লোকসভা আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বুধবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন অখিলেশ। তাঁর দলের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার জন্য বহুজন সমাজবাদী পার্টির (বিএসপি) নেত্রী মায়াবতীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

অখিলেশ বলেন, সাধারণ মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়েছে। বিজেপির অপশাসনের জবাব দিয়েছে ভোটের মাধ্যমে। যে সরকার মানুষকে আঘাত করে, সময় এলে মানুষ তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেয়। মানুষকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। বিজেপি একটি প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করতে পারেনি।

অখিলেশ যাদব আরও বলেন, ‘যদি ২০১৭ সালে বহুজন সমাজবাদী পার্টির (বিএসপি) সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্ব থাকত, তবে হয়তো বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারত না। নিজেদের কারণেই বাজে দিন দেখতে হচ্ছে বিজেপিকে।’

সংবাদ সম্মেলনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে অভিযোগ করেন অখিলেশ যাদব। তিনি বলেন, ‘গোরখপুর ও ফুলপুরে ইভিএম নিয়ে অনেক অভিযোগ এসেছে। যদি নির্বাচন ব্যালট পেপারে হতো, তবে কয়েক লাখ ভোটের ব্যবধানে হারত বিজেপি।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১৯ সালের নির্বাচন সামনে রেখে বিজেপিবিরোধী বৃহৎ জোট গঠন ত্বরান্বিত হতে পারে। আর উপনির্বাচনে বিজেপির হার এতে রসদ জোগাবে। এরই মধ্যে উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজবাদী পার্টির মধ্যে এক দুর্লভ সমঝোতা হতে দেখা গেছে।

উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য বলেছেন, বিরোধী দলগুলো যে এত ভোট পাবে, তা ভাবতে পারেনি বিজেপি। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বীকার করছি, বিএসপি-সমর্থিত এসপির প্রার্থী যে এত ভোট পাবে, তা আমরা ধারণাও করতে পারিনি।’

হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, যে সময়ে হারল বিজেপি, তা দলটির জন্য লজ্জার বিষয়। দলটির কয়েকজন নেতা তা স্বীকারও করেছেন। রাজ্য সরকারের ক্ষমতায় আসার এক বছর পূরণ হওয়ার চার দিনের মধ্যেই যোগী আদিত্যনাথকে এমন হারের মুখোমুখি হতে হলো।

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে ৮০টি আসনের মধ্যে ৭৩টিতে জয়ী হয়েছিল বিজেপি ও এর জোট। ওই সময় বহুজন সমাজবাদী পার্টি কোনো আসনেই জিততে পারেনি। তবে সমাজবাদী পার্টি পেয়েছিল পাঁচটি আসন।