সিরিয়ায় হামলার পরিণতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের সতর্ক করল রাশিয়া

দামেস্কের আকাশে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র। সিরিয়া, ১৪ এপ্রিল। ছবি: রয়টার্স
দামেস্কের আকাশে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র। সিরিয়া, ১৪ এপ্রিল। ছবি: রয়টার্স

সিরিয়ায় সরকারি স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের হামলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় যেকোনো ‘পরিণতি’র বিষয়ে সতর্ক করেছে সিরিয়ার মিত্র দেশটি।

রাশিয়া সতর্ক করে বলেছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে অপমান অগ্রহণযোগ্য ও মেনে নেওয়ার মতো নয়। এ ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক ডাকবে রাশিয়া।

সিরিয়ার দুমায় রাসায়নিক হামলার জন্য বাশার আল-আসাদের বাহিনীকে দায়ী করে দেশটির সরকারনিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন স্থাপনায় সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পাশে আছে রাশিয়া। তারা দেশটিতে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সাজানো বলে অভিযোগ করেছে। সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন তলানিতে।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত টুইটারে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেছেন, তাঁর দেশকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর পরিণতি শুভ হবে না জানিয়ে তিনিও পাল্টা জবাব দিয়েছেন।

সিরিয়ায় হামলা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত অ্যান্টোনভের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আগে থেকে ঠিক করে রাখা দৃশ্য কেবল মঞ্চায়ন করল যুক্তরাষ্ট্র। তাঁদের ভয় দেখানো হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া হবে না। পরিণতির জন্য দায়ী থাকবে ওয়াশিংটন, লন্ডন আর প্যারিস।

রাশিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমের বরাতে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তারা ট্রাম্পকে নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

দুমা প্রতিরক্ষা কমিটিতে থাকা আলেকজান্দ্রার শেরিন বলেছেন, ‘ট্রাম্পকে আমাদের সময়ে দ্বিতীয় হিটলার বলা যায়। কারণ, সোভিয়েত ইউনিয়নে হিটলার যে সময়ে আক্রমণ চালিয়েছিল, তেমনি সময় বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প।’

আসাদ সরকারকে সমর্থনের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইরানের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন ট্রাম্প। সিরিয়ায় সামরিক হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘নিষ্পাপ মানুষ, নারী ও শিশুদের গণহত্যাকারীদের সঙ্গে কোন দেশ যুক্ত থাকতে পারে?’

২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সরিয়ে নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারলেই সিরিয়ায় শান্তি ফিরবে। এই নতুন শক্তির মাধ্যমেই আইএস নির্মূল করা সম্ভব বলে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও তার মধ্যপ্রাচ্যের মিত্ররা মনে করে। উল্টো পিঠে রাশিয়া মনে করে, বাশারকে ক্ষমতায় রেখেই সিরিয়ায় শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তা ছাড়া আইএসকে দমন করতে হলে বাশারকে শক্তিশালী করাই যুক্তিযুক্ত হবে। সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পক্ষে রয়েছে ইরান।

ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অ্যান্ড ডেমোক্রেসিসের গবেষক বেন তালেবু বলেছেন, হামলা ছিল নিয়ন্ত্রিত। শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়। দীর্ঘমেয়াদি সংঘর্ষে জড়ানোর জন্য এ হামলা চালানো হয়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কত দিন পর্যন্ত প্রস্তুত থাকতে পারবে। সিরিয়ার জন্য তাদের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য আছে কি না, তা প্রমাণ করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স যৌথভাবে সিরিয়ার কয়েকটি সরকারি স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে। দামেস্কের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে দেখা যায়। ছবি: এপির সৌজন্যে
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স যৌথভাবে সিরিয়ার কয়েকটি সরকারি স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে। দামেস্কের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে দেখা যায়। ছবি: এপির সৌজন্যে

৭ এপ্রিল দুমাতে রাসায়নিক হামলার অভিযোগে গত বুধবার ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র আসছে।’ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পকে সমর্থন দেন। ফ্রান্সের পক্ষ থেকেও ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়া হয়।

গত শুক্রবার রাতে জাতিসংঘে মস্কোর দূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না রাশিয়া।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে স্থানীয় সময় ভোর ৩টা ৫৭ মিনিটে ৬টি বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে। শহরের ওপর ধোঁয়ায় ভরে যায়।

সিরিয়ায় মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের পক্ষ থেকে বলা হয়, দামেস্কে সামরিক ঘাঁটি ও গবেষণা কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। সামরিক ঘাঁটিতে সিরিয়ান সেনাবাহিনীর এলিট ইউনিট রিপাবলিকান গার্ডের ফোর্থ ডিভিশনের সদস্যরা ছিলেন।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শনিবার বলেছে, সিরিয়ার একটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। ওই স্থাপনায় রাসায়নিক অস্ত্রের মজুত রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ৪টি টর্নেডো বিমান হোমস থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত একটি সামরিক স্থাপনায় স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এটি একটি সাবেক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি। সিরিয়া সরকার একে রাসায়নিক অস্ত্র মজুতের গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছে।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে হামলাটি সফল হয়েছে।’

সিরিয়ার হামলার ঘটনায় ইরানের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক পরিণতি ভালো হবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তারা যা করেছে, তা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা সিরিয়ায় ১০০টির বেশি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী অনেকগুলো ঠেকিয়ে দিয়েছে। তবে রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী এতে যুক্ত ছিল না।

এ আক্রমণের ঘটনাকে পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলোর নৃশংস বর্বর আগ্রাসন বলে অভিহিত করেছে সিরিয়া। আক্রমণকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ‘যথার্থ’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব এ ধরনের হামলা বন্ধ করতে আহ্বান জানান। এ ছাড়া মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় হামলার ঘটনায় যাতে বেসামরিক মানুষের ক্ষতি না হয়, তা দেখতে হবে।