ডেটিং করলে বেশি নম্বর দেন তিনি!

যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কলেজের দর্শনের অধ্যাপক কেরি ক্রোনিন। কলেজে তাঁকে সবাই চেনে ‘ডেটিং প্রফেসর’ নামে। কারণ শিক্ষার্থীদের ডেটিং বা অভিসারে যাওয়ার অ্যাসাইনমেন্ট দেন তিনি। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কলেজের দর্শনের অধ্যাপক কেরি ক্রোনিন। কলেজে তাঁকে সবাই চেনে ‘ডেটিং প্রফেসর’ নামে। কারণ শিক্ষার্থীদের ডেটিং বা অভিসারে যাওয়ার অ্যাসাইনমেন্ট দেন তিনি। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে

কলেজে তাঁকে সবাই চেনে ‘ডেটিং প্রফেসর’ নামে। কারণ শিক্ষার্থীদের ডেটিং বা অভিসারে যাওয়ার অ্যাসাইনমেন্ট দেন তিনি। আর সেই অ্যাসাইনমেন্ট সফলভাবে করতে পারলেই মেলে অতিরিক্ত নম্বর।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কলেজের এই অধ্যাপকের নাম কেরি ক্রোনিন। তিনি দর্শনের শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের পড়ানোর অংশ হিসেবেই ডেটিংয়ে যাওয়ার অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু করেছিলেন তিনি। ১২ বছর আগে প্রথম এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন কেরি। ওই সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বলেছিলেন, ডেটিং বা অভিসারে গেলেও কোনো ধরনের শারীরিক সংসর্গ করা যাবে না। একই সঙ্গে ওই সময় মদ খাওয়া যাবে না বলেও শর্ত দেন তিনি।

এখনো চলছে কেরি ক্রোনিনের সেই অ্যাসাইনমেন্ট। আগে এই অ্যাসাইনমেন্ট করা শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক হলেও, এখন তা নয়। তবে এই অ্যাসাইনমেন্ট করলে শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত নম্বর পান।

সম্প্রতি এ বিষয় নিয়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের সঙ্গে কথা হয় কেরির। তিনি বলেন, প্রথম যখন এই অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছিল, তখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ ফিসফাস হয়েছিল। দর্শনের এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, ডেটিংয়ের সামাজিক বিষয়টি অনেক আগেই আমাদের সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে গেছে। এখন আয়োজন করে কারও সঙ্গে ডেটিং করতে যাওয়া কিছুটা অদ্ভুত এবং বর্তমান ধারণার ঠিক উল্টো।’

এখন এই বিষয়টি নিয়ে কেরির বক্তব্যের একাধিক ভিডিওচিত্র ইউটিউবে পোস্ট করা হয়েছে। কেরি বলেন, কারও সঙ্গে শারীরিক সংসর্গের বদলে এক সঙ্গে বসে এক কাপ কফি খাওয়া বা ভদ্রভাবে আলাপ করার মধ্য দিয়ে পরস্পরের ঘনিষ্ঠতা বেশি বাড়ে। তাঁর মতে, এখন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা কলেজজীবনে প্রেম করতে বেশি আগ্রহী নয়। মূলত পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের কথা ভেবে প্রেমে জড়ান না তাঁরা। আবার মার্কিন মুলুকে পড়াশোনার খরচ বেশি হওয়াও এর একটি কারণ।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রথম বিয়ের গড় বয়স ২৯ দশমিক ৫ বছর এবং নারীদের ২৭ দশমিক ৪ বছর। অন্যদিকে ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী কলেজ পাস করার পর একজন স্নাতকের কমপক্ষে ৩৭ হাজার ডলারের বেশি ঋণ থাকে। তাই শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক লক্ষ্য থাকে প্রেমে না পড়ে চাকরি খুঁজে বের করা।

ওয়েডিং রিং রয়টার্স: ছবিটি প্রতীকী। ছবি: রয়টার্স
ওয়েডিং রিং রয়টার্স: ছবিটি প্রতীকী। ছবি: রয়টার্স

কেরি ক্রোনিন বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতি যৌন সংসর্গে উৎসাহ দিলেও, ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে নির্মল ডেটিংয়ের বিষয়টি।’ তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ডেটিংয়ে যাওয়ার জন্য সঙ্গী খুঁজে বের করতে বলা হয়। এতে করে এ সংক্রান্ত স্নায়ুচাপ এবং সরাসরি কথা বলার জড়তা দূর হওয়ার পথ তৈরি হয়।

তবে ডেটিং বললেই যে রোমান্টিক সম্পর্কের চিত্র আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে তাতে আপত্তি আছে কেরির। তিনি বলেন, ‘সবাই রোমান্টিক সম্পর্কে জড়ানোর জন্যই ডেটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় না। তবে সবাই একটি সম্পর্ক তৈরি করতে চায়। আর সেই সম্পর্কই মানবিক।’

অবশ্য কেরি ক্রোনিনের এই উদ্যোগে সুফলও মিলেছে। তাঁর কয়েকজন শিক্ষার্থী এরই মধ্যে অ্যাসাইনমেন্ট করতে গিয়ে উপযুক্ত জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়েছেন। এমনই এক দম্পতি হলেন এরিকা পেনা ও জেরাড। ২০০৮ সালে প্রথম ডেটিংয়ের পর থেকে তাঁদের সম্পর্কের শুরু। পরে ২০১৪ সালে বিয়ে করেন তাঁরা। ডেটিংয়ের অ্যাসাইনমেন্ট সম্পর্কে এরিকা পেনার মন্তব্যই কেরি ক্রোনারের কাজের সার্থকতা প্রমাণ করে। এরিকা বলেন, ‘এটি না হলে, স্নাতক শেষ হওয়ার পরই আমাদের পথ আলাদা হয়ে যেত।’