মালয়েশিয়ায় কারাবন্দী নেতা আনোয়ার মুক্তি পেলেন

কারামুক্তির পর সংবাদ সম্মেলন করছেন মালয়েশিয়ার সরকারি জোটের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। পাশে তাঁর স্ত্রী ওয়ান আজিজাহ।  ছবি: এএফপি
কারামুক্তির পর সংবাদ সম্মেলন করছেন মালয়েশিয়ার সরকারি জোটের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। পাশে তাঁর স্ত্রী ওয়ান আজিজাহ। ছবি: এএফপি

মালয়েশিয়ার কারাবন্দী সংস্কারপন্থী নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম গতকাল বুধবার মুক্তি পেয়েছেন। দেশটির রাজা তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা করলে বন্দিদশা থেকে মুক্তি মেলে তাঁর। মুক্তির প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, মালয়েশিয়ায় নতুন ভোর এল।

দেশটির রাজা পঞ্চম সুলতান মুহাম্মদ গতকাল সকালে আনোয়ারকে নিঃশর্ত ক্ষমা করেন। এ খবর পৌঁছে যায় কাঁধের অস্ত্রোপচারজনিত কারণে
কয়েক মাস ধরে হাসপাতালে থাকা আনোয়ারের কাছে। তিন বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্তির পর তিনি যখন হাসপাতাল থেকে হেঁটে বের হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বেশ খোশমেজাজে ছিলেন। এ সময় তাঁর পরনে ছিল কালো স্যুট ও টাই। চুল ছিল পরিপাটি করে আঁচড়ানো।

হাসপাতাল থেকে আনোয়ার ইব্রাহিম সরাসরি রাজপ্রাসাদে চলে যান রাজার সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে দেশটির সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও আনোয়ারের জোটের নেতা ৯২ বছর বয়সী মাহাথির মোহাম্মদও উপস্থিত ছিলেন। রাজপ্রাসাদ থেকে তিনি বাসায় গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেই সংবাদ সম্মেলনে আগামী দিনের রাজনীতি, মাহাথিরের সঙ্গে অতীতের তিক্ততা ভুলে নতুন সম্পর্ক কেমন হবে, সেসব নিয়ে তিনি কথা বলেন।
রাজার ক্ষমা পাওয়ায় সরাসরি রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। তবে ৭০ বছর বয়সী আনোয়ার জানান, আপাতত তিনি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চান। শিগগিরই মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে আগ্রহী নন। তিনি বলেন, ‘আমি মাহাথির মোহাম্মদকে বলেছি, আমি এই মুহূর্তে মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে কাজ করতে চাই না।’ তিনি প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও উপপ্রধানমন্ত্রী ওয়ান আজিজাহ ওয়ান ইসমাইলের সরকারকে সমর্থন দিয়ে যেতে চান। প্রসঙ্গত, আজিজাহ আনোয়ারের স্ত্রী। তাঁর মুক্তিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

নব্বইয়ের দশকে মাহাথির মোহাম্মদের সরকারে উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আনোয়ার। পরে ১৯৯৮ সালে মাহাথির তাঁকে বরখাস্ত করলে তিনি মাহাথিরের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। এর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই তাঁকে দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মুক্তি পাওয়ার পর ২০০৪ সালে আনোয়ার আবার বন্দী হন। সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের শাসনামলে ২০১৫ সালে সমকামিতার দায়ে দণ্ডিত হন আনোয়ার। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য মাহাথির ও নাজিবের সরকার আনোয়ারের প্রতি এমন আচরণ করেছে বলে সমর্থকেরা দাবি করেন। নাজিবের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে মাহাথির জোট বাঁধেন আনোয়ারের দলের সঙ্গে। চার দলের এই জোট ছয় দশক ধরে ক্ষমতাসীন জোটকে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসে।

অতীতের এসব তিক্ততার কারণে মাহাথিরের সঙ্গে আনোয়ারের সম্পর্ক ভবিষ্যতে কেমন হবে, তা দেখতে মুখিয়ে আছেন অনেকে। তবে সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘আমি মাহাথিরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তিনি তাঁর সাহস প্রমাণ করেছেন। আমি কেন তাঁর প্রতি দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখব? আমি ও মাহাথির—দুজনই অতীতের বিষয়গুলো মাটিচাপা দিয়ে দিয়েছি। ওগুলো তো বহু আগের কথা।’ তিনি আরও বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় নতুন ভোর এল। এ জন্য আমি মালয়েশিয়ার জনগণকে ধন্যবাদ জানাই। ধর্ম বা বর্ণের ভিত্তি নয়, মালয়েশিয়া চলবে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে। মালয়েশিয়ার জনগণ পরিবর্তন চায়।’

রিজুয়ান ইসমাইল নামের আনোয়ারের এক সমর্থক বলেন, ‘তাঁকে মুক্ত অবস্থায় দেখে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছি। তবে লড়াই এখনো শেষ হয়নি।’ জ্যাক সেং নামের আরেক সমর্থক বলেন, আনোয়ারকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখার অপেক্ষায় তিনি। দুই নেতার মধ্যে কোনো দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে না বলেই তিনি আশা করেন।
এদিকে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং আগামী শনিবার মাহাথিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ তথ্য জানিয়েছে।