ফিলিপাইনের ইমেলদার মতো বিলাসবহুল জীবনযাপনের তালিকায় নাজিবের স্ত্রী

রয়টার্স ফাইল ছবি।
রয়টার্স ফাইল ছবি।

ফিলিপাইনের সাবেক একনায়ক ফার্দিনান্দ মার্কোসের স্ত্রী ইমেলদা মার্কোসের বিলাসবহুল জীবনযাপনের কথা সবারই মোটামুটি জানা। এ তালিকায় নাম লেখালেন মালয়েশিয়ার সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের স্ত্রী রোসমাহ মানসুর। গতকাল শুক্রবার ভোররাতে নাজিবের কুয়ালালামপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ যেসব মূল্যবান জিনিসপত্র জব্দ করে, তার বেশির ভাগই ছিল রোসমাহয়ের।

সরকারি তহবিলের অর্থ তছরুপের অভিযোগে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে নাজিবের বাড়ি, ফ্ল্যাট ও তাঁর সঙ্গে যোগসূত্র আছে এমন জায়গাগুলোতে গত বুধবার থেকে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এরই অংশ হিসেবে গতকাল ভোরে তাঁর কুয়ালালামপুরের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, প্যাভিলন রেসিডেন্সেস নামের বিলাসবহুল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে দামি হাতব্যাগ, অলংকার, ঘড়িসহ মূল্যবান জিনিসপত্র জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে নামীদামি নকশাকারের করা হাতব্যাগের ২৮৪টি বাক্স এবং অলংকার ও নগদ অর্থে ভরপুর ৭২টা স্যুটকেস আছে। স্যুটকেসগুলোতে মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, মার্কিন ডলারসহ বিভিন্ন দেশের বিপুল পরিমাণ মুদ্রা পাওয়া গেছে। জিনিসগুলো জব্দ করে পুলিশ কালো রঙের ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়।

পুলিশের বাণিজ্যিক অপরাধ শাখার পরিচালক অমর সিং ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘কী পরিমাণ অলংকার জব্দ করা হয়েছে, তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। পরে হিসাব করে বলতে হবে।’

নাজিবের বাবা আবদুল রাজাক হোসেইন মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। দেশটির দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ১৯৭০ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত নাজিবকে তাঁর বাবার মতোই আদর্শের জন্য রাজনীতি করা একজন নেতা মনে করা হতো। মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদও নাজিবের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন। তবে সরকারি তহবিল তছরুপের অভিযোগ তুলে তিনি নাজিবের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হন।

নির্বাচনে পরাজয়ের পরপরই নাজিব রাজাক ও তাঁর স্ত্রী রোসমাহ মানসুর ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়তে চান। তবে মাহাথিরের হস্তক্ষেপে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাজিবের মাসিক বেতন ছিল ২২ হাজার ৮২৬ রিঙ্গিত। প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা অবস্থায় কোনো ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য যুক্ত না থাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। এ ছাড়া পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে তিনি প্রতি মাসে ১৬ হাজার রিঙ্গিত পেতেন। ৪০ হাজারেরও কম রিঙ্গিত আয় দিয়ে কীভাবে এতটা সম্পত্তির মালিক হলেন, সেটাই খতিয়ে দেখছে দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন। অভিযোগ আছে, নাজিবের স্ত্রী বিদেশ ভ্রমণের সময় দামি হাতব্যাগ, ঘড়ি ও অলংকার কিনতেন। কেনাকাটায় তাঁর পছন্দের দেশ ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া। চুলের সজ্জায় প্রতিদিন ব্যয় করতেন ১ হাজার ২০০ রিঙ্গিত। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে রোসমাহ বা নাজিব কখনো কিছু বলেননি।

বিলাসী জীবনযাপনের জন্য রোসমাহের প্রতি সাধারণ নাগরিকদের ক্ষোভ আছে। তাঁরা তাঁকে ইমেলদা মার্কোসের সঙ্গে তুলনা করেন। ইমেলদা ১৯৬৫ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ফিলিপাইনের ফার্স্ট লেডি থাকাকালে দামি কাপড়চোপড়, অলংকার ও জুতা সংগ্রহের জন্য আলোচিত ছিলেন। একই পথের পথিক রোসমাহও।

এদিকে, নাজিবকে মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির হতে বলা হয়েছে।