এল সালভাদরে সরকারি বাহিনীকে 'বন্দুকযুদ্ধে' মদদ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

এল সালভাদরে বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত এলিট প্যারামিলিটারি পুলিশ কর্মকর্তাদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে পুলিশ, খবর সিএনএনের। সালভাদরের সরকার পরিচালিত এই অভিযানের নাম ‘মানো দুরা’। অভিযানটি সফল করতে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সামরিক বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ধারাবাহিকভাবে হাজার হাজার মিলিয়ন ডলার দিয়ে যাচ্ছে।

সিএনএনের হাতে আগেভাগেই জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন আসে। সেখানে দেশটির পুলিশকে বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য ব্যাপকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়মুক্তির বিধানের বিলোপের সুপারিশও করা হয়েছে।

গত বছরের প্রথম ছয় মাসে সেখানকার পুলিশের একটি দলের বিরুদ্ধে ৪৩ জন গ্যাং সদস্যকে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে প্রমাণ মিলেছে, এসব হত্যার অনেকগুলোই করেছে পুলিশ। সিএনএন বলছে, এ দলকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থসহায়তা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।

স্পেশাল রিঅ্যাকশন ফোর্সেস (এফইএস) নামে পরিচিত এই বাহিনী এ বছরের শুরুর দিকে ভেঙে দেওয়া হয়। এর অনেক সদস্য পরে নতুন এলিট ফোর্সে যোগ দেয়। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এলিট ফোর্সকে অর্থসাহায্য দিচ্ছে।

সালভাদর পুলিশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের সহায়তা করেছে এবং ওই সহায়তা কারা গ্রহণ করছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। এটি কঠোর গোপনীয়তার মাধ্যমে করা হয়। তবে প্রকাশিত দলিলপত্রে দেখা যায়, দলটিকে ২০১৬ সালে ৬৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার, ২০১৭ সালে ৭২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার অর্থসহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তারা বলছে, দলটি এফবিআই ও ডিইএর কাছ থেকে ‘প্রশিক্ষক’ পেয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম-সম্পর্কিত বিষয় সম্পর্কে জানেন, সিএনএনকে বলেছেন, এফইএস-ই যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাপ্রাপ্ত সেই দল। কংগ্রেসকে দেওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিবেদন থেকে সরঞ্জামগত সহায়তার বিস্তারিত জানা গেছে, যদিও সহায়তাটি কারা পেয়েছে, তার নাম সেখানে প্রকাশ করা হয়নি।

এফইএস ও এ-জাতীয় দলকে দেওয়া মার্কিন সহায়তা এমএস-১৩ দলের বিরুদ্ধে পুলিশের প্রতি নৈতিক সমর্থনকেই প্রকাশ করে। এমএস-১৩ সালভাদরের একটি অপরাধী দল, যারা ১৯৮০ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে আত্মপ্রকাশ করে। সম্প্রতি এর সদস্যরা আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং এল সালভাদরে এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এমএস-১৩ গ্রুপের সদস্যদের বহুজাতিক হুমকি বলেছে, আর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন ‘পশু’।

একদিকে এফইএসের কর্মকর্তারা গ্যাংস্টারদের রাস্তায় গুলি করে মারছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের টাকা ও অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে। আবার আমেরিকা এমএস-১৩ গ্রুপের হাজার হাজার সদস্যকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠাচ্ছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, ফেরত পাঠানোর কারণে এল সালভাদরে গ্রুপটির পুনরুত্থান ঘটতে পারে।

সিএনএনের কাছে থাকা তথ্যপ্রমাণ দেখালে সালভাদরের মার্কিন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন যে যুক্তরাষ্ট্র এফইএসকে সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে।’ ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ব্যাপকভাবে পর্যবেক্ষণের পরেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার সালভাদরের পুলিশকে সহায়তা করে। সেখানে মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয়াদি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। মার্কিন দূতাবাস অবশ্য অস্ত্র-সহায়তার বিষয়ে কিছু বলেনি।

এল সালভাদরের পুলিশের আইন মেনে না চলার সংস্কৃতির প্রমাণ পাওয়া যায় হোয়াটসঅ্যাপে পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি ফাঁস হওয়া কথোপকথন থেকে। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে কোন গ্যাং সদস্যদের হত্যা করা হবে এবং হত্যাগুলো কী কৌশলে লুকানো হবে, তা নিয়ে কথা বলছিলেন। বার্তাগুলো ২০১৭ সালের মে মাসে প্রথম ফাঁস হয়।

পুলিশকে ওই বার্তা সম্পর্কে সিএনএন জিজ্ঞাসা করলে তারা তা অস্বীকার করে। একটি বার্তায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি হত্যার আগে এক গ্যাং সদস্যকে পিটিয়েছিলেন, তার সহকর্মীদের কাছে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা দেন। তিনি জানান, ওই ঘটনাস্থলে এমনভাবে অস্ত্র রেখে আসা হয়, যাতে ঘটনাটিকে প্রকৃতই বন্দুকযুদ্ধের মতো মনে হয়।