অপরাধী তালিকার হাজারো ব্যক্তিকে উবারের লাইসেন্স

তালাল চ্যামঅট
তালাল চ্যামঅট


তালাল চ্যামঅটের নোংরা অতীত জানা খুব কঠিন কিছু নয়। হাতের মুঠোয় থাকা ইন্টারনেটে এই নাম দিয়ে সার্চ করলেই খুব সহজেই বের হয়ে আসে তাঁর অতীতের কার্যকলাপ। আগ্নেয়াস্ত্র রাখার দায়ে ছয় বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। এ ছাড়া তিনি এক কিশোরীর পায়ে গুলি করা, মধ্যপ্রাচ্যে রকেট লাঞ্চার পাচারের চেষ্টা, স্ত্রীকে শাবল দিয়ে আঘাত করা এবং ঘাতককে ভাড়া করার পরিকল্পনার অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন।

তিন বছর পর কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন চ্যামঅট। এরপর রাইডশেয়ার প্রতিষ্ঠান উবারের চালক হওয়ার জন্য আবেদন করেন। আর কোম্পানিও তাঁর অতীতের রেকর্ড যাচাই-বাছাই না করে ২০১৫ সালে তাঁকে অনুমতি দিয়ে দেয়। কিন্তু তিন মাস পরেই তাঁর এক যাত্রীকে বাড়িতে নিয়ে যৌন হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর দায়ে এখন তাঁর ২৫ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।

অথচ উবারের আইন অনুযায়ী, গুরুতর অপরাধের দায়ে দণ্ড ভোগ করেছেন বা বড় ধরনের ড্রাইভিং অপরাধ করেছেন, এমন ব্যক্তিদের অনুমতি দেওয়ার কথা নয়। কিন্তু উবার যে এই প্রথম এমন ব্যক্তিকে অনুমতি দিয়েছে, তা নয়। এ নিয়ে সিএনএন এক তদন্ত করেছে।

তদন্তে দেখা গেছে, উবারের বাছাই-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া চালকদের মধ্যে ক্যানসাস শহরে এক চালকের বিরুদ্ধে যাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই ব্যক্তি একসময় হত্যাচেষ্টার দায়ে দোষী। এ ছাড়া টেক্সাসের ব্রাজোস কাউন্টিতে প্যারোলে মুক্তি পাওয়া এক হত্যাকারীকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান লুইস অবিসপো শহরে নথিপত্র নেই, এমন অভিবাসীকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে এখন তিন যাত্রীকে মারধর ও একজনের ওপর হামলা চালানোর বিচার চলছে। তবে তাঁরা কেউই এখন আর উবারের চালক নন।

রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর রেকর্ড ও মামলার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সিএনএন দেখেছে, অপরাধী হিসেবে রেকর্ড রয়েছে এমন হাজারো ব্যক্তিকে রাইডশেয়ার কোম্পানি উবার ও লিফট অনুমতি দিয়ে থাকে।

এই প্রতিষ্ঠান দুটো সিএনএনকে জানিয়েছে, আবেদনকারীদের অতীত যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া খুবই জোরালো ও স্বচ্ছ। তবে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় তাদের অতীতের ভুল তারা স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, গত বছর দুই লাখের বেশি আবেদন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাতিল হয়েছে।

যদিও দুই প্রতিষ্ঠানই বলছে, তারা কাগজপত্র খুঁটিয়ে যাচাই-বাছাই করে। কিন্তু এই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় সরকারের আরেক ধাপ নিরীক্ষণের যে চেষ্টা ছিল, তাতে তারা বাধা দিয়েছে। সিএনএন দেখেছে উবারের নেতৃত্বে রাইডশেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো লবিং করে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় আঙুলের ছাপ বা সরকারি নিরীক্ষণের বিষয়গুলো বন্ধ করতে সফল হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রণীত আইন অনুযায়ী, রাইডশেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেই এই যাচাই-বাছাই করে থাকে। সিএনএন দেখেছে, ৪৩টি অঙ্গরাজ্যে আইন অনুযায়ী আবেদনকারীর আঙুলের ছাপের প্রয়োজন নেই। ৩১টি অঙ্গরাজ্যে উবারের সুপারিশকৃত নীতিমালার প্রতিফলন দেখা গেছে আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়েছে।