ব্রেক্সিট গণভোটেও পুতিন প্রভাব!

ভ্লাদিমির পুতিন
ভ্লাদিমির পুতিন

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদ প্রশ্নে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত গণভোটে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া হস্তক্ষেপ করে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা জোরালো হয়েছে। বিচ্ছেদের পক্ষে প্রচার চালানো ‘লিভডটইইউ’র প্রতিষ্ঠাতা আরন ব্যাংকসের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত রাশিয়ান দূতের তিন দফা সাক্ষাতের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এমন আশঙ্কা জোরালো হলো। ফলে বিষয়টি এখন তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাজ্য।

আগামী মঙ্গলবার সংসদীয় কমিটির জেরার মুখোমুখি হবেন আরন ব্যাংকস। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আরন ব্যাংকস ডানপন্থী রাজনীতিক মাইকেল ফারাজের ভালো বন্ধু। ডানপন্থী দল ইউকে ইন্ডিপেনডেন্ট দলের তিনি অন্যতম অর্থ যোগানদাতা।

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ব্রেক্সিট গণভোটে বিচ্ছেদের পক্ষে প্রচারণায় নেতৃত্ব দেওয়া আনুষ্ঠানিক গ্রুপ ‘ভোট লিভ’-এর বাইরে গিয়ে আলাদা প্রচার চালায় আরণ ব্যাংকসের চালু করা ‘লিভডটইইউ’ গ্রুপ। গণভোটের প্রচারণায় ব্যয়ের প্রকৃত হিসাব গোপন করার দায়ে গ্রুপটিকে ইতিমধ্যে ৭০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৮৫ লাখ টাকা) জরিমানা করেছে নির্বাচন কমিশন।

২০১৬ সালের জুনে যুক্তরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ইইউ থেকে বিচ্ছেদের পক্ষে ভোট দেয়। সেই বিচ্ছেদ কার্যকর করা নিয়ে এখনও নানা বিভক্তি ও নাটকীয়তা চলছে। এই বিচ্ছেদ ব্রেক্সিট নামে পরিচিত।

গত রোববার দ্য সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গণভোটের প্রচারে আরণ ব্যাংকস তিন দফা যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত রাশিয়ান দূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ২০১৬ সালের নভেম্বরে ‘লিভডটইউকে’ পরিচালক অ্যান্ডি উইগমোরও রাশিয়ান দূতের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। উইগমোরের এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার তিন দিনের মাথায়। এর আগে আরন ব্যাংকস, অ্যান্ডি উইগমোর এবং নাইজেল ফারাজ যুক্তরাষ্ট্রের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

আরন ব্যাংকস এবং উইগমোর রাশিয়ান দূতের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেন। তারা ৬টি স্বর্ণখনি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে ফাঁস হওয়া এক ইমেইল থেকে জানা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ভোট প্রভাবিত করতে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি তদন্ত করছে। ওই তদন্তের সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে ক্যামব্রিজ অ্যানালেটিকা নামে এক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নাম। যারা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারের কাজে লাগাত। ক্যামব্রিজ অ্যানালেটিকার সঙ্গে আরন ব্যাংকসের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি কোম্পানির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এলডন ইন্স্যুরেন্স এবং বিগ ডাটা ডলফিন্স নামের ওই দুই কোম্পানির বিরুদ্ধে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছে।

গত এপ্রিলে ক্যামব্রিজ অ্যানালেটিকার পরিচালক ব্রিটানি কায়সার যুক্তরাজ্যের সংসদীয় কমিটির জিজ্ঞাসাবাদে বলেছিলেন, আরণ ব্যাংকসের দুই প্রতিষ্ঠানে তথ্যের অপব্যবহারের প্রবণতা বিদ্যমান। ক্যামব্রিজ অ্যানালেটিকা, ইউকে ইনডিপেনডেন্ট পার্টি এবং তাঁর নিজের দুটি কোম্পানি যাতে সমন্বয় করে কাজ করে সে জন্য কৌশল প্রণয়ন করতে বলেছিলেন আরন ব্যাংকস। যার ফলে কেমব্রিজ অ্যানালেটিকা ইউকে ইনডিপেনডেন্ট পার্টির সদস্যদের তথ্য ভান্ডারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল।

যুক্তরাজ্যের ডিজিটাল, কালসার, মিডিয়া অ্যান্ড স্পোর্টস বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান ড্যামিয়ান কোলিন্স বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আরও ঘণিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসার কারণে তারা আরণ ব্যাংকসকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। ব্রেক্সিট ভোটের প্রচারণায় রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি খতিয়ে দেখার ঘোষণা দিয়েছে কমিটি।

আরন ব্যাংকস এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ব্রেক্সিট বিরোধী শক্তির অপতৎপরতা অংশ এসব।