এয়ার শোতে বিকিকিনি জমজমাট

যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়ারের ফার্নবরাতে বিশ্বের বৃহত্তম এয়ার শো। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়ারের ফার্নবরাতে বিশ্বের বৃহত্তম এয়ার শো। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যে ফার্নবরা ইন্টারন্যাশনাল এয়ার শোতে এবার ১৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিকিকিনির চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে আছে ১ হাজার ৪০০ বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের ক্রয় আদেশ, যার মূল্য ১৫৪ বিলিয়ন ডলার। আর আছে ১ হাজার ৪৩২টি ইঞ্জিন ক্রয়ের আদেশ, যার মূল্য ২১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার।

গত শুক্রবার এয়ার শোর পঞ্চম দিন শেষে ক্রয়-বিক্রয়ের এই তথ্য প্রকাশ করে আয়োজকেরা। আয়োজকেরা বলছে, ক্রয়-বিক্রয়ের এই চিত্র বৈশ্বিক উড়োজাহাজশিল্পের শক্তিশালী অবস্থানকেই নির্দেশ করছে। এ বছর যে অঙ্কের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে, তা ২০১৬ সালের চেয়ে ৬৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বেশি।

প্রতি দুই বছর পরপর যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়ারের ফার্নবরাতে বিশ্বের বৃহত্তম এই এয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়। সাত দিনব্যাপী এবারের শো শেষ হচ্ছে আজ রোববার। শুক্রবার পর্যন্ত প্রথম পাঁচ দিন ছিল কেবল উড়োজাহাজ নির্মাতা, বিনিয়োগকারী ও সরকারি-বেসরকারি-সামরিক গ্রাহকদের জন্য। আর শেষ দুদিন সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য। ১৬ জুলাই এই শোর উদ্বোধন করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।

অন্যান্য মেলায় যেমন পসরা সাজিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য প্রদর্শন করে, এখানেও ঠিক তা-ই। উড়োজাহাজশিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোম্পানিগুলো নিজ নিজ পণ্য নিয়ে এই শোতে হাজির হয়। বিশাল এলাকাজুড়ে সারি সারি রাখা হরেক রকমের বিমান ও হেলিকপ্টার। আছে নানা সামরিক উড়োজাহাজ। এসব আবার একের পর এক আকাশে উড়ে নানা কসরত দেখায়। বিশাল বিশাল প্যাভিলিয়নে উড়োজাহাজ নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো নানা পণ্য, যন্ত্রাংশ ও সেবা প্রদর্শন করে।

আগামী বছরের মার্চে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। এই বিচ্ছেদের ঠিক ৩৭ সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠিত এবারের এয়ার শো রেকর্ড সংখ্যক বৈশ্বিক অংশগ্রহণকারী আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে।

আয়োজকেরা জানান, এবার প্রায় ১০০ দেশ থেকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকেরা শোতে অংশ নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণকারী ছিল চীন থেকে। প্রথম পাঁচ দিনে ৮০ হাজার লোক শো প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে।

এয়ার শোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জন্য তৈরি ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজ। ছবি: প্রথম আলো
এয়ার শোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জন্য তৈরি ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজ। ছবি: প্রথম আলো

এবারের শোতে পূর্বনির্ধারিত বাণিজ্যিক প্রতিনিধি (ডেলিগেট প্রোগ্রাম) অংশগ্রহণের হার ২০ শতাংশ বেড়েছে। সামরিক-বেসামরিক মিলিয়ে ১৫৬ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি শোতে অংশ নেয়, যার মধ্যে সামরিক প্রতিনিধিদল ছিল ১৩৩টি।

শোতে বাণিজ্যিক কর্মযজ্ঞের পাশাপাশি চলে উড়োজাহাজশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সেমিনার। এতে সুপারসনিক উড়োজাহাজের ফেরা, মহাকাশের শাসন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হয়।

এবারের শো অত্যন্ত সফল—মন্তব্য করে ফার্নবরা ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী বলেন, এই শোর আগেই বৈশ্বিক উড়োজাহাজশিল্প ১৪ হাজার উড়োজাহাজ তৈরির চাপে ছিল (বেকলগ)। শোর সফলতা প্রমাণ করে, বিশ্বব্যাপী উড়োজাহাজশিল্প কতটা শক্তিশালী ও উদীয়মান।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জন্য তৈরি ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজটি শোতে নিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি। আগামী ২০ আগস্ট বিমানটি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করার কথা। তার আগেই বাংলাদেশের পতাকাবাহী এই বিমান শোতে প্রদর্শিত হয়ে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরল।