নিরাপত্তা সহকারীদের কর্মে বিপাকে মাখোঁ

ইমানুয়েল মাখোঁ
ইমানুয়েল মাখোঁ
>
  • বুধবার লো মঁদ পত্রিকায় ছাত্র পেটানোর ভিডিও ফাঁস
  • শুক্রবার ছাত্রীকে গলাধাক্কার ভিডিও ফাঁস, বেনালা বরখাস্ত
  • রোববার পার্লামেন্টে বিরোধীদের তোপের মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সাবেক প্রধান দেহরক্ষী আলেকসঁদ বেনালার (২৬) দুটি মারমুখী ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আজ রোববার পার্লামেন্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেহা কোলোঁকে ধুয়ে দিয়েছেন বিরোধীরা। ভিডিওতে দেখা যায়, রাজধানী প্যারিসে গত মে দিবসে ছাত্রদের বিক্ষোভে বেনালা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইন নিজের হাতে তুলে নেন। সরাসরি ছাত্রদের পেটাতে দাঙ্গা পুলিশের হেলমেট পরে রাস্তায় নেমে পড়েন। প্রায় আড়াই মাসের কিছু বেশি সময় আগের ওই সহিংস বিক্ষোভে ১০৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠছে মাখোঁর বিরুদ্ধেও।

ফরাসি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেহা কোলোঁকে জেরা করবে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির আইন কমিশন। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটও তাঁকে আগামী মঙ্গলবার জেরা করবে বলে জানিয়েছে।

ফরাসি পত্রিকা লো মঁদ গত বুধবার বেনালাকে শনাক্ত করে প্রথম ভিডিওটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, বেনালা এক ছাত্রকে রাস্তায় ফেলে পেটাচ্ছেন। গত শুক্রবার দ্বিতীয় ভিডিও প্রকাশিত হয়। সেটিতে দেখা যায়, এক ছাত্রীকে গলাধাক্কা দিয়ে সড়ক ছেড়ে চলে যেতে বলছেন তিনি। গত বছর নির্বাচনে জয়ের পর মাখোঁ তাঁর চিফ অব স্টাফের প্রধান সহকারী হিসেবে বেনালাকে এলিসি প্যালেসে নিয়োগ দিয়েছিলেন। পুলিশ না হয়েও মে দিবসের বিক্ষোভে পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি। ফ্রান্সজুড়ে প্রশ্ন উঠছে, এই ক্ষমতা কোথায় পেলেন বেনালা? তাহলে কি মাখোঁই বেনালাকে রাস্তায় নেমে পেশিশক্তি দেখাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন? মাখোঁর আরেক নিরাপত্তা সহকারী ভ্যাঁসোঁ খাজও ওই দিন একই কাজে জড়িত ছিলেন। বেনালা ও ভ্যাঁসোঁকে তিন দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়ে গত শুক্রবার জেরা করা হয়।

গত শুক্রবার ১৫ দিনের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বেনালাকে। ইসি-লে-মুলিনোতে তাঁর বাড়িতে গতকাল শনিবার তল্লাশিও চালিয়েছে পুলিশ। আড়াই মাস পেরোলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই ব্যাপারে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেননি কেন, তা নিয়ে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে চারদিকে। ভিডিও দুটি ধারণ ও প্রকাশের সঙ্গে জড়িত সন্দেহ ফ্রান্সের তিন পুলিশ সদস্যকেও গতকাল ও আজ দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরাও আইন ভঙ্গ করেছেন বলে জানিয়েছেন সরকারি কৌঁসুলি।

খোদ মাখোঁ এসব সমালোচনার বিষয়ে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে কোনো বিবৃতি দেননি। ডানপন্থী ঝানু রাজনীতিক মাহিন লো পেন টুইটারে লিখেছেন, মাখোঁ তাঁর অবস্থান পরিষ্কার না করলে বেনালার ঝামেলা মাখোঁর ঝামেলায় পরিণত হতে বেশি দেরি নেই। আর তা যদি হয়, বাম নেতা জঁ লুকের মন্তব্য, প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাখোঁর কেলেঙ্কারি ওয়াটারগেটের থেকে কম কিছু হবে না। সত্তরে দশকে নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রে বিরোধী দলের সদর দপ্তর ওয়াটারগেটে প্রশাসনকে ব্যবহার করে আড়ি পাতার ঘটনায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন।

মাত্র এক বছর আগে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত মাখোঁর প্রথম কোনো রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির ঘটনা আলোড়ন তুলছে গণমাধ্যমে। ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোর প্রধান খবর হচ্ছে এখন এটি। বিরোধীরাও ছেড়ে কথা বলছেন না। ফ্রান্সজুড়ে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতি আঙুল তুলছেন অনেকেই। এর আগে স্ত্রীকে ফার্স্ট লেডির পদমর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে মাখোঁর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব হয়েছিল জনগণ।

সদ্য বিশ্বকাপ জেতা উৎসবমুখর ফ্রান্সে মাখোঁর জনপ্রিয়তা যেখানে আকাশচুম্বী হওয়ার কথা, সেখানে এই কেলেঙ্কারির খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তাঁর জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে কমছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে এই সপ্তাহের জনমত জরিপ। গত বছর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া মাখোঁকে এখন মাত্র ৩৯ শতাংশ লোক সমর্থন করছে। ক্ষমতার ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা আগামী কিছুদিন মাখোঁকে কোথায় দাঁড় করায়, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখ এখন সেদিকে।