সাম্যবাদ থেকে কিউবা সমাজতন্ত্রের পথে

সংবিধান পরিবর্তন করে একদলীয় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে কিউবা। ছবি: রয়টার্স
সংবিধান পরিবর্তন করে একদলীয় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে কিউবা। ছবি: রয়টার্স
>
  • খসড়া সংবিধান উত্থাপন
  • একদলীয় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা
  • ব্যক্তিগত সম্পত্তি স্বীকৃতি পাবে
  • সমলিঙ্গের বিয়ের সুযোগ সৃষ্টি

সাম্যবাদ থেকে সমাজতন্ত্রের পথে হাঁটতে চাইছে কিউবা। দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির হাত ধরেই সে পথে যাত্রার লক্ষ্য নির্ধারণ করে নতুন খসড়া সংবিধান জাতীয় পরিষদে গত শনিবার উত্থাপন করা হয়েছে। পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যই এই প্রয়াস বলে দেশটির  কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কিউবার বর্তমান সংবিধানটি সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের। এটি প্রণীত হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। সেই সংবিধান পরিবর্তন করে একদলীয় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে দেশটি। সাম্যবাদী রাষ্ট্র কিউবা ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে পুঁজিবাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করে। তবে খসড়া সংবিধানে ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জাতীয় পরিষদে জানান দেশটির সর্বোচ্চ নির্বাহী পর্ষদ কাউন্সিল অব স্টেটের সেক্রেটারি হোমেরো আকোস্তা। এর ফলে কিউবায় ক্ষুদ্র ব্যবসা ও বিদেশি বিনিয়োগ বিকশিত হবে। বর্তমান সংবিধান কেবল রাষ্ট্রীয়, সমবায়ভিত্তিক ও কৃষকের সম্পত্তির স্বীকৃতি দেয়।

সমাজতন্ত্রের দিকে যাত্রার লক্ষ্য বিষয়ে জাতীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট এস্তেবান লাজো বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কিউবা ভিন্ন যুগে প্রবেশ করেছে। নতুন সংবিধানের খসড়ায় কিউবা ‘সাম্যবাদী সমাজ নির্মাণের’ ধারা থেকে ‘সমাজতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের’ ধারার ওপর জোর দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। এর অর্থ এই নয় যে আমরা আমাদের আদর্শ পরিত্যাগ করছি। আমরা একটি সমাজতান্ত্রিক, সার্বভৌম, স্বাধীন, সমৃদ্ধ ও টেকসই দেশে বিশ্বাস করি।’

ছয় দশক ধরে কিউবা শাসন করেছেন অসংবাদিত নেতা প্রয়াত ফিদেল কাস্ত্রো ও তাঁর ভাই রাউল কাস্ত্রো। খসড়া সংবিধানে কিউবার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ও যৌথ নেতৃত্বের কাঠামো আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। রাউল কাস্ত্রো (৮৬) চলতি বছরের এপ্রিলে তাঁর শিষ্য মিগেল দিয়াজ-কানেলের (৫৮) কাছে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন। প্রেসিডেন্টের পদ ছেড়ে দিলেও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান রাউল ২০২১ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির প্রধানের পদে থাকবেন।

হোমেরো আকোস্তা শনিবার জাতীয় পরিষদে বলেন, খসড়া সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট আর কাউন্সিল অব স্টেট ও কাউন্সিল অব মিনিস্টারের প্রধানের পদে থাকবেন না। বরং প্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। জাতীয় পরিষদের প্রেসিডেন্টকে কাউন্সিল অব স্টেটের প্রধান বানানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। খসড়া সংবিধানে প্রেসিডেন্টের বয়স ও মেয়াদের সময়সীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, প্রথম দফায় ক্ষমতা গ্রহণের সময় প্রেসিডেন্টের বয়স ৬০ বছরের কম হতে হবে। পাঁচ বছর করে দুই মেয়াদে ১০ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না প্রেসিডেন্ট।

খসড়া সংবিধানে বিয়ের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে বিয়ের সংজ্ঞায় ছিল, একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে বিয়ে। খসড়ায় বিষয়টি পরিবর্তন করে দুজনের মধ্যে বিয়ের কথা বলা হয়েছে। এর ফলে সমলিঙ্গের বিয়ের দ্বার উন্মুক্ত হবে। 

চলতি সপ্তাহে খসড়াটি নিয়ে জাতীয় পরিষদে আলোচনা হবে। জাতীয় পরিষদে অনুমোদনের পর খসড়াটির বিষয়ে জনগণের মতামত চাওয়া হবে। কোনো সংযোজন বা বিয়োজন প্রয়োজন হলে সেগুলো সম্পন্ন করার পর চূড়ান্ত প্রস্তাবটিতে গণভোটের আয়োজন করা হবে। গণভোটে উতরালে নতুন সংবিধান পাবে কিউবা।