তাজমহল রক্ষণাবেক্ষণ বেসরকারি সংস্থাকে দিতে আদালতে ভারত সরকারের আবেদন

বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি তাজমহল। ছবি: এএফপি
বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি তাজমহল। ছবি: এএফপি

বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার হাতে দেওয়ার আবেদন করেছে ভারতের উত্তর প্রদেশ সরকার। গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এ আবেদন করা হয়।

ভারতের মুঘল যুগের ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিসৌধ তাজমহল। বর্তমানে তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে ভারতের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই)। তবে তাজমহল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চলা মামলায় শুনানির সময় আদালত উত্তর প্রদেশ সরকারকে ভর্ৎসনা করেছেন যে তাজমহলের সৌন্দর্য রক্ষায় সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এ পর্যায়ে গতকাল উত্তর প্রদেশ সরকার তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কোনো বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন করেছে সুপ্রিম কোর্টে। ২৫০ পাতার হলফনামাসহ এ আবেদন করেন উত্তর প্রদেশ সরকারের অতিরিক্ত আইনজীবী জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি। তিনি দাবি করেন, তাজমহল এলাকায় দূষণরোধ, প্লাস্টিক বর্জন এলাকা ঘোষণাসহ এলাকাকে দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। এ লক্ষ্যে তাজমহল এলাকার ১০ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দূষণমুক্ত করা হোক। এ এলাকার মধ্যে তাজমহলের পাশাপাশি থাকছে আগ্রার দুর্গ, ফতেহপুর সিক্রির দুর্গ।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টে তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণ ও রক্ষার দাবিতে দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির অভিযোগ তুলে এএসআইকে ভর্ৎসনা করেন। সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, ঐতিহাসিক এই সৌধে পোকামাকড় ও কীটের আক্রমণ শুরু হলেও এএসআই তা বন্ধের জন্য কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

ওই দিন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল এ এন এস নাদকার্নি। তিনি ডিভিশন বেঞ্চকে জানান, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় আদালতের পরামর্শ মতো আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ নিয়োগের চিন্তাভাবনা করছে। পাশাপাশি এএসআইয়ের আইনজীবী জানান, যমুনার স্রোতহীন নোংরা পানির জন্য তাজমহলে কীটের আক্রমণ হচ্ছে। ওই সময় আদালত বলেন, যেভাবে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে, তাতে আদালত অবাক হচ্ছেন।

তাজমহলকে রক্ষা করার আবেদন জানিয়েছিলেন বিশিষ্ট পরিবেশবিদ এম সি মেহতা। তাঁর আইনজীবী জানান, শীর্ষ আদালত একাধিকবার নির্দেশ দিলেও তা সঠিকভাবে পালন করা হয়নি। তাই এখন তাজমহল ভয়াবহ রূপ নিতে বসেছে। তিনি আরও বলেন, তাজমহলের নিরাপত্তাব্যবস্থাও উন্নত নয়। বেশির ভাগ জায়গায় সিসিটিভি কাজ করছে না। কেন্দ্রীয় সরকার ও উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকার শুধু অর্থ রোজগার ছাড়া আর কিছুই করছে না।

মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর সহধর্মিণী বেগম মমতাজ মহলের স্মৃতি রক্ষায় গড়ে তুলেছিলেন এই ঐতিহাসিক ভালোবাসার সৌধ। ১৬৩২ থেকে ১৬৫৩ সালের মধ্যে ৪২ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছিল তাজমহল। ১৯৮৩ সালে ইউনেসকো তাজমহলকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিসৌধের তালিকাভুক্ত করে।