সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের 'ভুয়া খবর' গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‍ভুয়া খবরের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে তা গণতন্ত্রের জন্য রীতিমতো হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ‘ডিজিটাল, কালচার, মিডিয়া অ্যান্ড স্পোর্টস’-বিষয়ক সংসদীয় কমিটির (ডিসিএমএ) প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। ভুয়া খবর ঠেকাতে ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং নির্বাচনী আইন যুগোপযোগী করার পরামর্শ দিয়েছে এই কমিটি।

আজ রোববার ডিসিএমএর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘কেমব্রিজ অ্যানালেটিকা’র বিরুদ্ধে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে রাজনৈতিক প্রচারণার অভিযোগে তোলপাড় হয়। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট ফেসবুক ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে প্রতিষ্ঠানটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে কূট প্রচারণা চালিয়েছে বলে আলামত পাওয়া যায়। একই বছর যুক্তরাজ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদ প্রশ্নে অনুষ্ঠিত গণভোটে বিচ্ছেদের পক্ষে ফেসবুকে একই রকম প্রচার হয়েছে। এমন প্রচারের পেছনে রাশিয়া কলকাঠি নেড়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া ‘ভুয়া খবর’ নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলে, তা নির্ণয়ে অনুসন্ধান করে ডিসিএমএস কমিটি।

২৬ জুলাই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্রেক্সিট গণভোটের সময়ে বিচ্ছেদের পক্ষের লোকেরা সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ২৭ লাখ পাউন্ডের বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে। এসব বিজ্ঞাপনের তালিকাও প্রকাশ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এর পরপরই ডিসিএমএস কমিটির প্রতিবেদনটি এল।

দীর্ঘ ১৮ মাস তদন্ত শেষে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব ও ভীতিকে উসকে দিয়ে নির্বাচনে ভোট ভাগিয়ে নিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে ‘ভুয়া খবর’ ছড়ানোর বিষয়টি গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে। আর এ কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে ফেসবুক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী মানুষ এখন তথ্যের জন্য গতানুগতিক মাধ্যম—সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা রেডিওর বদলে ফেসবুক, টুইটারের মতো ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমের ওপর বেশি নির্ভরশীল। মানুষ এসব মাধ্যমে দেখা খবরকে সহজে বিশ্বাস করে। কারণ নিজেদের পরিচিত বা জানাশোনা লোকজন এসব শেয়ার করে। অথচ এসব তথ্যের ওপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

কমিটির প্রধান ক্ষমতাসীন দলের এমপি ড্যামিয়ান কোলিন্স বিবিসিকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বিকৃত তথ্য’-প্রবাহ এতটাই বেড়েছে যে সত্য তথ্যগুলো আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে। কোম্পানিগুলোর অজান্তেই এসব কাণ্ড ঘটে চলছে। যে কারণে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে নির্বাচনী আইনকে সময়োপযোগী করা জরুরি। তিনি বলেন, ‘বিকৃত তথ্যের’ জন্য কোম্পানিগুলোকে দায়বদ্ধ করতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো লোকেরা ‘ফেইক নিউজ’ বা ভুয়া খবর শব্দজোট ব্যবহার করে মন্তব্য করে ড্যামিয়ান কোলিন্স বলেন, বিষয়টি ‘ডিসইনফরমেশন’ বা ‘বিকৃত তথ্য’ হিসেবে আখ্যায়িত হওয়া উচিত।

প্রতিবেদনে আইন সংশোধনের বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে আধুনিক সময় বিবেচনায় নির্বাচনী আইনের হালনাগাদকরণ, বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সম্পর্কে শিক্ষা চালু এবং এর ব্যয় মেটাতে ‘সামাজিক যোগাযোগ’ (সোশ্যাল নেটওয়ার্ক) কোম্পানিগুলোর ওপর কর আরোপ করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজনৈতিক প্রচারণার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা তৈরি, বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানের নাম ও খরচ প্রকাশের পাশাপাশি এগুলোর তালিকা রাখা এবং ‘বিকৃত তথ্য’ প্রকাশের জন্য কোম্পানিগুলোকে দায়বদ্ধ করা।