বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী হামলা কমছে

লন্ডনে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে মঙ্গলবার নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরে পথচারীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনার পর পুলিশের সতর্ক অবস্থান। ছবি: রয়টার্স
লন্ডনে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে মঙ্গলবার নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরে পথচারীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনার পর পুলিশের সতর্ক অবস্থান। ছবি: রয়টার্স

ইউরোপে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলেও সামগ্রিকভাবে বিশ্বব্যাপী এসব ঘটনা কমে আসছে। বেশ কিছু জরিপের তথ্য দিয়ে এমনই বলছে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।

লন্ডনে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরে পথচারীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি ঘটে গত মঙ্গলবার ব্যস্ততম সময়ে। এ ঘটনাকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা মনে করছে পুলিশ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও যথারীতি তাঁর নিজস্ব ধরনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সন্দেহভাজনকে ‘পশু’ আখ্যা দিয়ে টুইট করেন তিনি।

এক বছরের কিছু সময় আগে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে আরেকটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছিল। হামলাকারী প্রথমে পথচারীদের ওপর গাড়ি তুলে দেয়, পরে ছুরি হাতে আক্রমণ চালায়। ৫ ব্যক্তি মারা যাওয়ার পাশাপাশি ৫০ জন আহত হয় ওই ঘটনায়। ট্রাম্প তখনো দুবার তাঁর টুইটারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। ২০১৭ সালে ‘সন্ত্রাসী’ শব্দটি ব্যবহার করে ট্রাম্প মোট ৪৭টি টুইট করেন।

এসবের পরও বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা কমছে। এ ধরনের ঘটনা কমার প্রবণতা অব্যাহত ছিল ২০১৭ সালেও। সালটি ছিল এ ধারাবাহিকতার তৃতীয় বছর। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের এক জরিপে এমন তথ্যই জানানো হয়েছে। ২০১৮ সালেও এখন পর্যন্ত ওই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্টাডি অব টেররিজম অ্যান্ড রেসপন্স টু টেররিজম’ (স্টার্ট) প্রোগ্রাম জানাচ্ছে, গত বছর বিশ্বজুড়ে ১০ হাজার ৯০০টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় হামলাকারীসহ মোট ২৬ হাজার ৪০০ জন মারা যায়। এ সংখ্যা ২০১৬ সালের তুলনায় কম। আবার ২০১৬ সালেও ২০১৫ সালের তুলনায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা হ্রাস পেয়েছে। এখনো পর্যন্ত ২০১৪ সালেই সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। সে বছর বিশ্বব্যাপী ১৭ হাজারটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৪৫ হাজারের বেশি লোক মারা যায়।

সন্ত্রাসী হামলা কমে যাওয়ার কারণ কী? পশ্চিম ইউরোপে ২০১৭ সালে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা কিছুটা বাড়লেও হতাহতের সংখ্যা ৬৫ শতাংশ কমে যায়। পুলিশ ও কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের ভূমিকার কারণে সম্ভবত এ সংখ্যা কমেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সম্প্রতি বলেছেন, ২০১৭ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত দেশটি ইসলামি জঙ্গিদের ১৩টি এবং উগ্র ডানপন্থীদের ৪টি সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা বানচাল করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বেড়ে গেলেও প্রকৃতপক্ষে সন্ত্রাসী হামলার সিংহভাগই ঘটে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলে। ২০১৭ সালে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ব্যাপকভাবে কমে যায়। স্টার্টের হিসাবে, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বছরে ৩৪ শতাংশ হারে কমছে, হতাহতের সংখ্যাও কমছে ৪৪ শতাংশ হারে।

২০১৭ সালের ইসলামিক স্টেটের ব্যাপক পতনের পর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা কমে আসে। শক্ত ঘাঁটির অভাবে এ জঙ্গি দলটি ইরাক ও সিরিয়ার মতো দেশগুলোতে এখন সেভাবে হামলা করতে পারছে না। ফলে সাধারণ নাগরিকদের হতাহত হওয়ার ঘটনা কমে গেছে।

ইসলামিক স্টেট এবং বোকো হারামের মতো দলগুলোর উত্থানের ফলেই আসলে ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ২০১৫ সালে ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়, ২০১৪ সালে মাত্র এক বছরে সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যুর ঘটনা ৮০ শতাংশ বেড়ে গেছে এবং এটি ২০০০ সালের তুলনায় নয় গুণ বেশি।

স্টার্টের ২০১৪ সালের তথ্য জানাচ্ছে, মাত্র তিনটি দেশ ইরাক, নাইজেরিয়া এবং আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় মৃতের সংখ্যা মোট সংখ্যার ৬০ শতাংশ।

২০১৮ সালে আগের বছরগুলোর মতো সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা কমবে কি না, সেটা বলার সময় এখনো আসেনি। আরেকটি পর্যবেক্ষক সংস্থা জেনস আইএইচএস মার্কিট বলছে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা ফিরে আসার ফলে ইউরোপে হামলার ঘটনা বেড়ে যেতে পারে। মঙ্গলবার দুটো ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের জঙ্গির সংখ্যা যা ধারণা করা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি।