যাজকদের হাতে হাজারো শিশু নিগ্রহে ভ্যাটিকানের দুঃখ প্রকাশ

ভ্যাটিকানের অভ্যন্তরে পবিত্র দরজা। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো
ভ্যাটিকানের অভ্যন্তরে পবিত্র দরজা। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

যাজকদের হাতে শিশু নির্যাতনের বিষয়ে অবশেষে মুখ খুলেছে ভ্যাটিকান। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার গ্র্যান্ড জুরি যাজকের হাতে শিশু নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে ধিক্কার জানানোর দুদিন পর ভ্যাটিকান দীর্ঘ সময়ের নীরবতা ভেঙেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ভ্যাটিকান এই ঘটনাকে ‘অপরাধ ও নৈতিকভাবে নিন্দনীয়’ বলে উল্লেখ করেছে।

আজ শুক্রবার সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভ্যাটিকান গণমাধ্যম কার্যালয়ের পরিচালক গ্রেগ বুরকে বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই সপ্তাহে পেনসিলভানিয়া এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর, এই ভয়াবহ অপরাধের মুখে পড়ে দুটো শব্দেই শুধু অনুভূতি প্রকাশ করা যায়—লজ্জা ও দুঃখ।’ তিনি বলেন, পেনসিলভানিয়ার গ্র্যান্ড জুরির দীর্ঘ সময় ধরে করা এ তদন্ত প্রতিবেদনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ভ্যাটিকান। শিশুদের ওপর যৌন হয়রানির এ ঘটনায় দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা প্রকাশ করা হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার যাজকের হাতে শিশু নিপীড়নের এ ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড জুরির প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের তিন শতাধিক যাজক সাত দশক ধরে এক হাজারের বেশি শিশুকে নির্যাতন করেছেন। দিনের পর দিন এসব ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে ক্যাথলিক চার্চ।

অস্ট্রেলিয়া থেকে লাতিন আমেরিকার কয়েকটি মহাদেশে ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়া যৌন হয়রানির ঘটনায় এই সপ্তাহে চাপের মুখে পড়েন পোপ ফ্রান্সিস। সময়-সময় যাজকদের এই বীভৎস পদস্খলনের ঘটনা তাঁর জন্য কঠিন পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক ক্যাথলিক দুশ্চিন্তায় ছিলেন যে, এসব ঘটনা মীমাংসা করতে না পারলে বিশ্বের নৈতিকতার প্রতীক হিসেবে পোপের সেবা সমালোচনার মুখে পড়তে পারে। 
যৌন নিপীড়নের ঘটনায় পোপের শীর্ষ উপদেষ্টা বোস্টনের শ্যন ও’ম্যালে বলেন, ‘গির্জার সব নেতার জন্য এখন ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে বেজে যাচ্ছে। ক্যাথলিকেরা আমাদের ওপর ধৈর্য হারিয়েছেন। আর সাধারণ মানুষেরা আমাদের ওপর আস্থা হারিয়েছেন।’

শিশু নির্যাতনের ঘটনা গির্জার নেতাদের ওপর কেমন চাপ সৃষ্টি করেছে, তা একটি ঘটনা থেকে বোঝা যায়, ও’ম্যালে আগামী সপ্তাহে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য এই ইস্যুতে একটি বড় আর্ন্তজাতিক সভায় অংশ গ্রহণ বাতিল করেছেন। 
পেনসিলভানিয়ার প্রতিবেদন প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টা পর ভ্যাটিকান দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। ৯০০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনের ব্যাপারে যদিও পোপ নিজে এখনো সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্রে উদার ও সংস্কারপন্থী ক্যাথলিকেরা একাত্মতা প্রকাশের বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

ভ্যাটিকান গণমাধ্যম কার্যালয়ের পরিচালক গ্রেগ বুরকে বিবৃতিতে বলেন, ২০০২ সালের পর এ ধরনের ঘটনা প্রায় নেই। গ্র্যান্ড জুরির প্রতিবেদনে পুরোনো ঘটনাগুলোই ধারাবাহিকভাবে আনা হয়েছে। ক্যাথলিক গির্জায় সংস্কার আনার পর যাজকের হাতে শিশু নির্যাতনের ঘটনাগুলো ব্যাপকভাবে কমে গেছে। তিনি বলেন, ভ্যাটিকান এই সংস্কার চলমান রাখাকে উৎসাহিত করে। শিশু ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এমন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ক্যাথলিক গির্জার সব পর্যায়ে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রচলিত আইনের সঙ্গে একীভূত করে শিশু নির্যাতনের বিচার হওয়ার ওপর জোর দিয়েছে ভ্যাটিকান। 
ভুক্তভোগীদের জানা দরকার, পোপ তাঁদের পক্ষে রয়েছেন। যারা ঘটনার শিকার হয়েছে, তারাই পোপের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওই করুণ ভয়াবহ ঘটনা, যা নিরপরাধ শিশুদের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে, সেসবের মূল উৎপাটনে গির্জা ভুক্তভোগীদের কথা শুনতে চায়।