আসামে শিক্ষকের গায়েও বিদেশি তকমা, পোরা হলো গারদে

ভারতের আসাম রাজ্যে কথিত বাংলাদেশি স্কুলশিক্ষককে পোরা হলো বিদেশি বন্দিশালায়। এবার খোঁজা হচ্ছে তাঁর মা-ভাই-বোনকেও। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, পুরোটাই স্বদেশিকে বিদেশি বানানোর আইনি প্রক্রিয়ার কুফল।

বিদেশি তকমা পাওয়া মহম্মদ খাইরুল ইসলাম আসামের মরিগাঁওতে থোঙ্গাসালি খন্ডপুকুরি নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। সরকারি এই বিদ্যালয়ে সমস্ত কাগজপত্র পরীক্ষা করেই তাঁকে নিযুক্তিপত্র দেওয়া হয়। জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) প্রথম তালিকা তৈরির কাজেও নিযুক্ত ছিলেন।

কিন্তু মরিগাঁও জেলা বিদেশি ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ‘বিদেশি’ বলে ঘোষণা করে। সঙ্গে সঙ্গেই সরিয়ে নেওয়া হয় এনআরসি প্রক্রিয়া থেকে। গা ঢাকা দিতে বাধ্য হন খইরুল। পরে অবশ্য ধরা পড়েন পুলিশের হাতে।

মরিগাঁওয়ের পুলিশ সুপার স্বপ্ননীল ডেকা গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, খাইরুলকে তেজপুরে কারাগারের বিদেশি বন্দিশালায় পাঠানো হয়েছে। তাঁর মা, দুই ভাই ও বোনকেও খোঁজা হচ্ছে।

প্রশ্ন উঠছে, খাইরুল যদি বিদেশিই হন, তাহলে তিনি সরকারি স্কুলে চাকরি পেলেন কী করে? সবকিছু যাচাই করেই তো চাকরি দেওয়া হয়।

আসামের মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা সাধন পুরকায়স্থ আজ শনিবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বদেশিকে বিদেশি বানানোর আইনি প্রক্রিয়ার ফল। আরও বহু বাঙালিই সেই আইনি প্রক্রিয়াতেই বিদেশি হচ্ছেন। আমদেরও হয়তো একদিন পোরা হবে জেলে।’

আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার সমন্বয় সমিতির চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্য মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৈরাজ্য চলছে। হিটলারের আমলকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে গোটা দেশ। কাগজপত্রের কোনো দাম নেই।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, অন্ধ জাতিবিদ্বেষ অসংখ্য খাইরুল তৈরি করবে। আসামের বাঙালিরা তবু প্রতিবাদ না করায় নিজের উষ্মা প্রকাশ করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য।

প্রসঙ্গত, আসামে বিভিন্ন জেলের ভেতর ৬টি বিদেশি বন্দিশালা রয়েছে। সেখানে প্রায় এক হাজার ‘বিদেশি’ রয়েছেন। এঁদের বেশির ভাগই সেই কথিত বাংলাদেশি।