যে কারণে ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে ছিলেন না দুই ছেলে

ছেলেদের সঙ্গে ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত
ছেলেদের সঙ্গে ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত

একসময়ের ২২ গজের খেলোয়াড় ইমরান খান এখন পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী। প্লেবয় ইমেজের কারণে প্রায় সব সময় আলোচনায় থাকা ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন শনিবার। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির প্রধান ইমরান খানের শপথ অনুষ্ঠানে ছিলেন না তাঁর দুই ছেলে। দুই ছেলে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কেন যাননি, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন ইমরানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথ।

‘দ্য নিউজ’-এর খবরে বলা হয়েছে, ইমরানের বিশেষ দিনে উপস্থিত ছিলেন না তাঁর দুই ছেলে। ইমরানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কেন সুলাইমান ও কাশিম ছিলেন না, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন জেমিমা। চলচ্চিত্র, প্রামাণ্য চিত্র ও টিভি অনুষ্ঠান প্রযোজক জেমিমা টুইটারে লেখেন, ‘তারা সেখানে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের বাবা সেখানে যেতে নিষেধ করেছেন।’

এদিকে ইমরানের প্রথম পক্ষের দুই ছেলে সুলাইমান ও কাশিম বাবার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হয়ে স্কটল্যান্ডে ছুটি কাটাতে ব্যস্ত থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন ইমরানের বর্তমান স্ত্রী বুশরা ইমরান। বিয়ের পর এই প্রথম তিনি বড় কোনো অনুষ্ঠানে মানুষের সামনে এলেন। শপথ গ্রহণ শেষে ইমরান ও ফার্স্ট লেডি বুশরা অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

১৯৯৫ সালে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ী পরিবারের জেমিমার সঙ্গে বিয়ে হয় ইমরানের। তাঁদের বিয়ে টিকেছিল নয় বছরের মতো। ইমরান ও জেমিমার দুই ছেলে সুলাইমান খান ও কাশিম খান। বিচ্ছেদের পর ছেলেদের নিয়ে যুক্তরাজ্যেই থাকেন জেমিমা গোল্ডস্মিথ।

গত ২৫ জুলাইয়ের সাধারণ নির্বাচনে ইমরানের দল পিটিআইয়ের জয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর টুইটে জেমিমা ছেলেদের বাবার সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছিলেন, ‘২২ বছর অপমান, বাধা আর ত্যাগের পর আমার ছেলেদের বাবা এখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।’

জেমিমার টুইট। ছবি: টুইটার থেকে
জেমিমার টুইট। ছবি: টুইটার থেকে

জেমিমার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০১৪ সালে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক রেহাম খানকে বিয়ে করেন ইমরান। ওই বিয়ে ১০ মাসের বেশি টেকেনি। এ বছর বুশরা মানেকা নামের এক নারী পীরকে বিয়ে করেন ইমরান। বুশরাকে ইমরান নিজের আধ্যাত্মিক গুরু বলে পরিচয় করিয়ে দেন।

শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার একটু পরে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খানের শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর আগে প্রথমে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করা হয়। প্রেসিডেন্ট হাউস আইওয়ান-ই-সদরে প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসাইন ইমরানকে শপথবাক্য পাঠ করান।

অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নাসিরুল মুলক, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার আসাদ কায়সার, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, এয়ার চিফ মার্শাল মুজাহিদ আনওয়ার খান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল জাফর মাহমুদ আব্বাসি, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার নভজ্যোৎ সিং সিধু, পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজা ও ওয়াসিম আকরাম, সংগীতশিল্পী সালমান আহমেদ ও আবরারুল হক, অভিনেতা জাবিদ শেইখ, সাবেক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার ফাহমিদা মির্জা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার দেশটির পার্লামেন্টে জাতীয় পরিষদের ১৭৬ জন সদস্য তাঁর পক্ষে ভোট দেন। একসময় ব্যাট-বল হাতে ক্রিকেট বিশ্ব কাঁপানো পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান এখন দেশ শাসনের ক্ষমতা পেলেন।

প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ইমরান খানের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ। ভোটাভুটিতে জাতীয় পরিষদের ৯৬ জন সদস্য শাহবাজকে ভোট দেন।

গত ২৫ জুলাই পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ১১৭টি আসনে জয় পায় ইমরানের দল পিটিআই। তবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৭টি আসন না পাওয়ায় ছোট ছোট দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে জোট সরকার গঠন করছে হবে পিটিআই।