ইউরোজোনের বেলআউট কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এল গ্রিস

পুনরুদ্ধার (বেলআউট) কর্মসূচি সফলভাবে শেষ করেছে গ্রিস। ছবি: এএফপি
পুনরুদ্ধার (বেলআউট) কর্মসূচি সফলভাবে শেষ করেছে গ্রিস। ছবি: এএফপি

অবশেষে ইউরোজোনের আর্থিক পুনরুদ্ধার (বেলআউট) কর্মসূচি সফলভাবে শেষ করেছে গ্রিস। ঋণসংকটে থাকা গ্রিসকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে এই সহায়তা কর্মসূচি নিয়েছিল ইউরোভুক্ত দেশগুলো। আর এই সহায়তা পেতে গ্রিসের জনগণকেও দিতে হয় চরম মূল্য। ব্যাপক ব্যয় সংকোচন নীতির চাপে পড়ে নাভিশ্বাস বের হয়ে যায় জনগণের।

বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আট বছর পর এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে পারবে গ্রিস। ইউরোপিয়ান স্ট্যাবিলিটি মেকানিজম (ইএসএম) গত তিন বছরে গ্রিসকে ৬ হাজার ১০৯ কোটি ইউরো সরবরাহ করেছে। আর এই সহায়তা গ্রিক সরকার দেশটির অস্থির অর্থনীতি ও ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠনে ব্যয় করেছে।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে মিলে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত গ্রিসকে দেওয়া হয়েছে ২৬ হাজার কোটি ইউরো, যা বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বেলআউট তহবিল। এই ঋণের শর্তস্বরূপ গ্রিস সরকারকে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণে চাপ দেওয়া হয়। গ্রিসের অর্থনীতি এখনো শ্লথগতিতে চলছে। সংকটের পড়ার আগের অবস্থানের চেয়ে এখনো ২৫ শতাংশ কম রয়েছে অর্থনীতির আকার।

ইউরোজোনের সেফগার্ড হিসেবে পরিচিত ‘ইউরোপিয়ান স্ট্যাবিলিটি মেকানিজম’। ইউরো মুদ্রা ব্যবহারকারী দেশগুলোর আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য ইউরোজোন এই তহবিল গঠন করে। গ্রিসের জন্য আরও ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার সহায়তা প্রস্তুত রেখেছে এই সংস্থা। তবে ওই সহায়তার প্রয়োজন নেই গ্রিসের।

ইএসএম চেয়ারম্যান মারিও সেনতেনো বলেন, ‘গ্রিস এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে।’ তিনি সহযোগিতার জন্য গ্রিসের জনগণকে ধন্যবাদ দেন। তিনি বলেন, ২০১০ সালের পর এই প্রথম গ্রিসের জন্য আর কোনো পুনরুদ্ধার তহবিলের প্রয়োজন নেই।

তবে গ্রিস কীভাবে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে, বিষয়টি নজরদারিতে রাখবে ইউরোপিয়ান কমিশন। ঋণদাতাদের সঙ্গে সম্মত হতে গিয়ে এথেন্স যেন পিছিয়ে না পড়ে। এ ছাড়া বেলআউট ঋণ পরিশোধ করতে হবে গ্রিসকে।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক কেভিন ফিদারস্টোন বলেন, বেলআউট কর্মসূচির শর্তাবলি মেনে চলার মাধ্যমে ইউরোজোনের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে গ্রিস সাহায্য করেছিল। ব্যয় সংকোচন নীতি কঠোরভাবে পালন করায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে গ্রিসের বের হয়ে যাওয়া (গ্রিক্সিট) ঠেকানো গেছে। ২০১৫ সালে তৃতীয় বেলআউটের জন্য কঠোর শর্তাবলি মানতে হয় গ্রিসকে, যা সত্যিই খুব যন্ত্রণাদায়ক ছিল।

গ্রিসের সংকটের শুরু ছিল ২০১০ সালে। সংকটে পড়ায় ২০১১ সালে এপ্রিলে ইইউ ও আইএমএফের কাছে সাহায্যের আবেদন করে এথেন্স। ওই বছরের মে মাসে ইউরোজোনের প্রথম দেশ হিসেবে গ্রিস ইইউ ও আইএমএফের কাছ থেকে বেলআউট প্যাকেজ গ্রহণ করে। তারা এথেন্সকে ১১ হাজার কোটি ইউরো দেয়। বিনিময়ে এথেন্স বেতন কর্তন ও কর বৃদ্ধির মতো যেসব পদক্ষেপ নেয়, তার চড়া মূল্য দিতে হয় জনগণকে।

২০১১ সালের অক্টোবরে অর্থনৈতিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় ১৩ হাজার কোটি ইউরোর দ্বিতীয় বেলআউট প্যাকেজ প্রস্তাব ঘোষণা করে ইউরোজোন। যেসব শর্তে ইইউ ও আইএমএফ ঋণ দিয়েছিল, তা পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৫ সালে তৃতীয় বেলআউট প্যাকেজ নেয় গ্রিস।