তেল-নির্ভরতা কমিয়ে কোন দিকে ঝুঁকছে সৌদি?

প্রতিবছর হজের উদ্দেশ্যে প্রায় ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান মক্কায় যান। ছবি: রয়টার্স
প্রতিবছর হজের উদ্দেশ্যে প্রায় ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান মক্কায় যান। ছবি: রয়টার্স

তেল-নির্ভর অর্থনীতি থেকে সরে আসতে চায় সৌদি আরব। অর্থনীতি বহুমুখী করার মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে তেল বিক্রির ওপর নির্ভরশীলতার অবসান ঘটাতে চায় দেশটি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

তেল-নির্ভরতা কমিয়ে কোন পথে যেতে চায় সৌদি আরব?

তেল ও গ্যাসের পর সৌদির অন্যতম আয়ের উৎস হলো হজ খাত। প্রতিবছর হজের উদ্দেশ্যে প্রায় ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান মক্কায় যান। ২০২০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে ২৭ লাখ হবে বলে আশা করছে সরকার। জাতীয় পর্যটন কমিটির সদস্য আবদুল ঘানি আল আনসারি অর্থনীতিতে এই খাতের অবদান বাড়াতে একে পুনর্বিন্যস্ত করার ওপর জোর দিয়েছেন।

ইকোনমিস্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সঠিক পরিকল্পনা নিলে হজ ও ওমরাহর মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়াতে পারে সৌদি আরব। এই খাতে তরুণদের জন্য আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। সৌদি জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) পর্যটন খাতের অবদান ২২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে হজ ও ওমরাহর মাধ্যমে আসে ১২ বিলিয়ন ডলার।

হজের কয়েকটি দিন ছাড়া বছরের যেকোনো সময়ে নির্ধারিত নিয়মে কাবা পরিদর্শন করাকে ওমরাহ বলে। হজ জীবনে একবার পালন করা ফরজ। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে হজ পালন করতে হয়। তবে ওমরাহ বছরের যেকোনো সময় পালন করা যায়।

আরব নিউজ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে প্রায় ছয় কোটি মানুষ ওমরাহ পালন করেন। অর্থনীতিবিদ আবদুল্লাহ কাতিব বলেন, হজ মৌসুম থেকে বার্ষিক আয় হয় ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন থেকে ৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। তবে হজ পালনকারী মানুষের সংখ্যার ওপর আয় নির্ভর করে।

হজ ও ওমরাহ থেকে যে আয় হয়, সেই আয়ের ৪০ শতাংশ আসে হজ পালনকারীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে। হজ পালনকারীরা যে উপহার কেনেন, তার মাধ্যমে আসে ১৫ শতাংশ আর খাদ্য ও অন্যান্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে হয় ১০ শতাংশ আয়। মক্কা চেম্বার অব কমার্সের তথ্যমতে, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসল্লিদের হজ পালন করতে খরচ পড়ে গড়ে ৪ হাজার ৬০০ ডলার। সৌদি নাগরিকদের খরচ পড়ে দেড় হাজার ডলার। তবে হজ পালনের খরচ সব দেশের জন্য এক নয়। ইরানের নাগরিকদের হজ পালনে খরচ পড়ে ৩ হাজার ডলার।

বেশ কয়েক বছর ধরেই অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে—এমন সতর্ক বার্তা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তেল-নির্ভর অর্থনীতি থেকে সৌদি আরবের সরে আসা প্রয়োজন, এমনটা মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ)। ২০১৬ সালে দেশটির বাজেট ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলার। ওই বছর বিশ্ববাজারের তেলের দাম কমে রেকর্ড পরিমাণ, যার বড় ধরনের একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে।

সৌদি আরবের রাজস্ব আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ অর্জিত হয় তেল রপ্তানি থেকে। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে বিশ্ববাজারে কমতে থাকে তেলের দাম। দেশটির এই আয়ে ধাক্কা লাগে। তেলের দাম কমতে থাকায় ২০১৫ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭৩৭ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৬৪০ বিলিয়ন ডলার হয়। সরকার নগদ সংরক্ষণ করতে নির্মাণ খাতে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে, যা ওই খাতকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটা ছাড়াও বাজেট ঘাটতি পূরণে আরও ব্যয় সংকোচন নীতি নিতে হয় দেশটিকে। তেলের দাম কমে যাওয়ায় ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক বন্ড বিক্রির পরিকল্পনা নেয় সরকার। ওই বছরই গ্রহণ করা হয় ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনা।