ইমরানকে মোদির চিঠি ও সিধু বিতর্ক

নরেন্দ্র মোদি ও ইমরান খান
নরেন্দ্র মোদি ও ইমরান খান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে চিঠি লিখলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই চিঠিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। পাকিস্তানের দাবি, চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি বন্ধ থাকা আলোচনা ফের শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন। মোদির চিঠি পাকিস্তান বা ভারত কেউই প্রকাশ করেনি।

তবে ভারতের সরকারি সূত্রের খবর, চিঠিতে তেমন কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অভিনন্দন জানিয়ে মোদি দক্ষিণ এশিয়াকে সন্ত্রাসমুক্ত করে গড়ে তোলার অভিপ্রায়ের কথা জানিয়েছেন।

সূত্রের কথায়, মোদি চিঠিটি লিখেছেন ১৮ আগস্ট। তাতে বলেছেন, এই জয় গণতন্ত্রের প্রতি পাকিস্তানি জনগণের বিশ্বাসকেই দৃঢ় করবে। মোদি লিখেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত সব সময় সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং অর্থবহ ও গঠনমূলক কথাবার্তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে এই উপমহাদেশের মানুষ উপকৃত হয়।

বিতর্কটা শুরু করেন পাকিস্তানের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি। সংবাদমাধ্যম জানায়, কুরেশি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নাকি বন্ধ আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দিয়েছেন মোদি। এই দাবি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে সোমবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক প্রেস বিবৃতিতে জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেননি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও তেমন কিছু বলেননি। তিনি যা বলেছেন, তা আলোচনা শুরুর ইঙ্গিতবাহী। মুখপাত্র বিবৃতিতে জানান, দুই দেশের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান নিরবচ্ছিন্ন আলোচনার মধ্য দিয়ে হোক, এটাই পাকিস্তান চায়। পরিবেশ বিষিয়ে দেওয়ার কোনো চেষ্টাই ফলপ্রসূ হবে না।

চিঠির পাশাপাশি অন্য এক বিতর্কের কেন্দ্রে এসে পড়েছেন ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের মন্ত্রী ও সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার নভজ্যোৎ সিং সিধু। ইমরানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে ইসলামাবাদ গিয়ে তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়াকে জড়িয়ে ধরেন। সেই ছবি ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং বলেছেন, সিধুর ওই আচরণ সমর্থনযোগ্য নয়। আকালি দল, শিব সেনা ও বিজেপি তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর উচিত অবিলম্বে সিধুর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কংগ্রেসের মুখপাত্র এই দাবির পাল্টা বলেছেন, ওটা ছিল সিধুর ব্যক্তিগত সফর। তিনি যা করেছেন সেটা তাঁর ব্যাপার। তবে দেশবাসী ভোলেনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন।

সিধু বলেছেন, পাঞ্জাব সীমান্তের মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে যে গুরুদ্বারায় প্রথম শিখ গুরু নানক দেব জীবনের শেষ কিছুদিন কাটিয়েছিলেন, সেখানে যাওয়ার অনুমতির বিষয়ে জেনারেল বাজওয়া ইতিবাচক কথা বলেন। তাঁর ওই প্রতিক্রিয়া সেই কারণেই। ওই অনুষ্ঠানে সিধু বলেন, ভোটে জেতার পর ইমরান খান বলেছিলেন, ভারত এক পা এগোলে পাকিস্তান দুই পা এগোবে। ভারত যাতে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করে সে জন্য তিনি দিল্লিকে বলবেন।
সিধুর ওই বক্তব্যের প্রায় পরপর মোদির চিঠি এবং বিতর্কের জবাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি। বন্ধ আলোচনা শুরুর ইঙ্গিত রয়েছে দুই তরফেই। যদিও ভারতের সরকারি সিদ্ধান্ত, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। এখন দেখার, নতুন সরকার দুই বছর ধরে বন্ধ থাকা আলোচনা শুরুর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে কি না।