৯৫ বছরেও রেহাই হলো না যুদ্ধাপরাধীর

নিউইয়র্কের কুইন্সে বাড়ির সামনে যুদ্ধাপরাধী জাকিভ পালিজ। ছবি: সংগৃহীত
নিউইয়র্কের কুইন্সে বাড়ির সামনে যুদ্ধাপরাধী জাকিভ পালিজ। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বন্দী প্রশিক্ষণ শিবিরে কর্মরত ৯৫ বছর বয়স্ক এক সহয়তাকারীকে জার্মানিতে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ১৪ বছর আগেই জাকিভ পালিজ নামের ওই যুদ্ধাপরাধীকে জার্মানিতে ফেরত পাঠাতে এবং বিচারের আওতায় আনতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার সকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাকিভ পালিজকে জার্মানির ডুসেলডর্ফ বিমানবন্দরে হস্তান্তর করা হয়। এর পর তাঁকে একটি বৃদ্ধাশ্রমে নেওয়া হয়।

জাকিভ পালিজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পোল্যান্ডের ট্রাভিঙ্কি ক্যাম্পে যুদ্ধবন্দীদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে একজন প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করতেন। তাঁর অপরাধ, তিনি যুদ্ধবন্দীদের জোর করে কাজ করাতেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধাপরাধী জাকিভ পালিজকে বহিষ্কারের সঙ্গে জড়িত প্রশাসনের প্রশংসা করে বলেছেন, যারা মানবেতর অবস্থার জন্য দায়ী তাদের ছাড় দেওয়ার অবকাশ নেই।

জাকিভ পালিজকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারে জন্য বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত
জাকিভ পালিজকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারে জন্য বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে, জাকিভ পালিজ আরও অনেক যুদ্ধাপরাধীদের মতো মিথ্যা তথ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিনি পোল্যান্ডে তার বাবার কৃষি কাজকর্মে যুক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। ১৯৫৭ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। তবে আসল পরিচয় প্রকাশ হলে ২০০৩ সালে তাঁর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়।

জাকিভ পালিজ নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় থাকতেন। যুদ্ধাপরাধীর পরিচয় প্রকাশ পাওয়ার পর সে সময় তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারে জন্য প্রায়ই বিক্ষোভ সমাবেশ করতেন সেখানকার বাসিন্দা। অবশ্য জাকিভ পালিজ সব সময় বলে আসছেন, তিনি ট্রাভিঙ্কিতে নাৎসি এস এস বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত যুদ্ধবন্দীদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে শুধুমাত্র একজন প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

২০০৪ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন যুদ্ধাপরাধী জাকিভ পালিজকে জার্মানিতে বহিষ্কার করবার চেষ্টা করছিলেন। তবে জাকিভ পালিজ জার্মানির নাগরিক না হওয়াই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। পরে জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিশেষ মানবিক আইনে তাঁকে জার্মানিতে গ্রহণ করেছে।

৯৫ বছর বয়সী জাকিভ পালিজ মঙ্গলবার সকালে ডাসেলডর্ফ বিমানবন্দরে অবতরণ করবার পর কর্তৃপক্ষ তাঁকে মুনস্টারল্যান্ডে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেন। জন্মগতভাবে এ পোলিশ নাগরিক ১৯৪৩ সালে বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে জার্মানি অধিকৃত পোল্যান্ডর ট্রাভিঙ্কি ক্যাম্পে যুদ্ধবন্দীদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাৎসি বাহিনীর হয়ে কাজ করলেও কোনো সময় তার জার্মান নাগরিকত্ব ছিল না।

ইতিপূর্বে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করে ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত যুদ্ধাপরাধী ইভান ডেমিয়ানইউকে জার্মানির মিউনিখে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে মিউনিখের একটি আদালত টানা দেড় বছর বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১১ সালে ৯১ বছর বয়স্ক ইভান ডেমিয়ানউের বিরুদ্ধে ১৯৪৩ সালে সোবিবর ডেথ ক্যাম্পে ২৭ হাজার ৯ শত বন্দীকে হত্যার কাজে সহায়তার অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন। অবশ্য ২০১২ সালেই ৯২ বছর বয়সে যুদ্ধাপরাধী ইভান ডেমিয়ানইউ মারা যান।