বিচার বিভাগ নতি স্বীকার করবে না: অ্যাটর্নি জেনারেল

রাশিয়া তদন্ত নিয়ে বারবারই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রোষানলে পড়তে হচ্ছে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসকে। ছবি: এএফপি
রাশিয়া তদন্ত নিয়ে বারবারই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রোষানলে পড়তে হচ্ছে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসকে। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একান্ত বিশ্বস্ত ও অনুগত ব্যক্তি বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। এসব বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগও পেয়েছিলেন। এখন উল্টে গেছে সব হিসাব-নিকাশ। নিয়োগ পেয়ে ‘নিরপেক্ষ’ দায়িত্ব পালন শুরু করাকে কেন্দ্র করে এখন দুজনের সম্পর্কের সুরের তাল কেটে গেছে।

রাজনৈতিক চাপের কাছে বিচার বিভাগ মাথা নোয়াবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক মন্তব্যের পাল্টা জবাবে এ কথা বলেছেন তিনি।

আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, নিজের বিভাগের (বিচার বিভাগ) ওপর অ্যাটর্নি জেনারেলের নিয়ন্ত্রণ নেই—ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই এই বিতর্কের শুরু। দেশটির বিচার বিভাগ নিয়ে ট্রাম্প বেশ সমালোচনামুখর। বিশেষ করে ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর পক্ষে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগের ব্যাপারে বিচার বিভাগের তদন্ত নিয়ে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ।

ওই সময় নির্বাচনী প্রচারে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস ট্রাম্পের সমর্থকই ছিলেন। তবে তদন্তের ক্ষেত্রে তাঁর দায়িত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে জানিয়ে তিনি এ কাজ থেকে সরে যান এবং তদন্তের দায়িত্ব দেন তাঁর সহকারী রড রোজেনস্টেইনকে।

সেশনসের এই সিদ্ধান্ত এবং বিশেষ কাউন্সেল রবার্ট মুলারের চলমান তদন্ত-প্রক্রিয়া নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট ট্রাম্প। ট্রাম্প বিচার বিভাগের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন কি না, সেটাও তাঁরা দেখছেন বলে জানা গেছে। এটা ট্রাম্পকে আরও খেপিয়ে তুলেছে। গণমাধ্যমে, বন্ধু মহলের আলোচনায় এবং টুইটারে এ নিয়ে তিনি ধারাবাহিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে চলেছেন। তিনি বরাবরই বলে আসছেন, তাঁর নির্বাচনী প্রচারের সঙ্গে রাশিয়ার কোনো সম্পর্ক ছিল না। বিচার বিভাগের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।

এই পরিস্থিতিতে নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর ট্রাম্প সেশনসকে বরখাস্ত করলে তাঁকে (ট্রাম্প) সমর্থন দেবেন বলে আভাস দিয়েছেন রিপাবলিকান দলের দুজন গুরুত্বপূর্ণ সিনেটর। তবে অন্য রিপাবলিকান নেতারা মনে করেন, এটা খুব বাজে কাজ হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁরা অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষে দাঁড়াবেন।

এক বিবৃতিতে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস বলেছেন, ‘যেদিন শপথ নিয়েছি, সেদিন থেকেই বিচার বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল থাকা অবস্থায় এই বিভাগের কোনো কাজ রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রভাবিত হতে পারবে না। আমি এই বিভাগের কর্মকাণ্ডের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করব। এই পর্যায়ে কোনো ঘাটতি দেখা দিলেই আমি ব্যবস্থা নেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মতো মেধাবী, নিবেদিতপ্রাণ আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত তদন্তকর্মী ও প্রসিকিউটর আর কোথাও নেই। তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রায় সফলভাবে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত।’

এর আগে তিনি ব্যাপকভাবে ট্রাম্পের সমালোচনার শিকার হয়েছেন। ট্রাম্প মনে করেন, রাশিয়া তদন্ত থেকে এভাবে সরে না গিয়ে সেশনসের উচিত ছিল তাঁর প্রতি বিশ্বস্ততা দেখানো।
কিছুদিন আগে ‘ফক্স’ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এবং বন্ধুদের অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি এমন একজন অ্যাটর্নি জেনারেলকে বসিয়েছি, যাঁর বিচার বিভাগের ওপর কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। জেফ সেশসন বিচার বিভাগের ওপর কখনো নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি, এটি একটি অসম্ভব ব্যাপার।’
রাশিয়া তদন্তের ব্যাপারে ট্রাম্প বলেন, ‘জেফ সেশনস এই তদন্ত থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন, যেটা করা তাঁর উচিত হয়নি। সেটা তিনি আমাকে আগে (তাঁকে নিয়োগ দেওয়ার আগে) বলতে পারতেন। এমনকি আমার শত্রুরাও আমাকে বলছে যে সেশনস নিজেকে তদন্ত থেকে সরিয়ে নিতে যাচ্ছেন, এটা আমাকে বলা উচিত ছিল। তাহলে তাঁকে এ পদে নিয়োগ দিতাম না। তিনি (জেফ সেশনস) পদটি নেওয়ার পর বলছেন, তাঁর দায়িত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক (তদন্তের ক্ষেত্রে) হচ্ছে।’

ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা জানেন, শুধু এই কারণে তাঁকে নিয়োগ দিয়েছিলাম। আমি অনুভব করছিলাম যে একজন বিশ্বস্ত লোক লাগবে। তিনি প্রকৃত সমর্থক ছিলেন। তিনি নির্বাচনী প্রচারে ছিলেন। তিনি জানতেন, সেখানে কোনো গোপন আঁতাত (রাশিয়ার সঙ্গে) হয়নি।’