ভেনেজুয়েলার উদ্বাস্তু পরিস্থিতি ভূমধ্যসাগরীয় 'সংকট পর্যায়ে' পৌঁছাচ্ছে

ইকুয়েডরের সঙ্গে পেরুর সীমান্ত, টুম্বেস অঞ্চলের অগাস ভের্দে ডিস্ট্রিক্ট অতিক্রমের পর একজন ভেনেজুয়েলান উদ্বাস্তুকে সাহায্য করা হচ্ছে। ছবিটি গতকাল শুক্রবার তোলা। রয়টার্স।
ইকুয়েডরের সঙ্গে পেরুর সীমান্ত, টুম্বেস অঞ্চলের অগাস ভের্দে ডিস্ট্রিক্ট অতিক্রমের পর একজন ভেনেজুয়েলান উদ্বাস্তুকে সাহায্য করা হচ্ছে। ছবিটি গতকাল শুক্রবার তোলা। রয়টার্স।

ভেনেজুয়েলার উদ্বাস্তু পরিস্থিতি ২০১৫ সালের ভূমধ্যসাগরীয় ‘সংকট পর্যায়ে’ পৌঁছাচ্ছে। জাতিসংঘ এই সতর্কবার্তা দিয়েছে।

বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, হুঁশিয়ারিটি এমন সময়ে এল, যখন ভেনেজুয়েলার ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে পলায়নপর মানুষের স্রোত থামানোর জন্য প্রতিবেশী দেশগুলো চেষ্টা করছে।

পেরু আজ শনিবার সীমান্তে কড়া বিধিনিষেধ চালু করে। এর আগে একটি আদালত ইকুয়েডরের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার চেষ্টা আটকে দেন।

২০১৪ সাল থেকে দুই কোটিরও বেশি ভেনেজুয়েলান দেশ থেকে পালিয়েছে। তারা একটি ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট থেকে পালাচ্ছে। এই সংকটের ফলে খাবার, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাব দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, তাঁদের দেশত্যাগের কারণ সেখানে নিজেদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা লাভ না করা।

এ অবস্থায় আটকে পড়ার ভয় আরও অনেককেই সীমান্তে ছুটতে উদ্বুদ্ধ করেছে। জনাথন জামব্রানো (১৮) এএফপিকে জানান, তিনি পাঁচ দিন যাবৎ রাস্তায় ছিলেন এবং আরও অনেককে পেরুর উদ্দেশে হাঁটতে দেখেছেন। জামব্রানো সীমান্ত টপকাতে পেরেছেন।

এএফপির মতে, শুক্রবার ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে পেরুর একটি ছোট শহরে ঢোকে। আরও হাজার হাজার মানুষ পেরুতে পৌঁছানোর জন্য ইকুয়েডর সীমান্তে চেষ্টা করছে।

তারা নতুন নিয়ম চালু হওয়ার আগেই পৌঁছাতে চাইছে। নতুন আইনে তাদের কাছে বৈধ পাসপোর্ট থাকা আবশ্যক হবে। আইনটি আজ শনিবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এখন অবধি শুধু পরিচয়পত্র থাকলেই ভেনেজুয়েলার নাগরিকেরা পেরুতে ঢুকতে পারে।

ইকুয়েডর গত সপ্তাহে এ ধরনের একটি আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু গতকাল শুক্রবার একজন বিচারক রায় দেন, ভেনেজুয়েলানদের বৈধ পাসপোর্ট সঙ্গে রাখতে বলা স্বাধীন চলাচলের আঞ্চলিক চুক্তির বরখেলাপ।

এ মাসের শুরুতে ব্রাজিলের আমাজন অঞ্চলে রোরাইমা প্রদেশের সীমান্ত বন্ধের এমন একটি প্রচেষ্টা একজন বিচারক খারিজ করেন।

‘সাহায্য করা কঠিন’
নতুন জীবনসন্ধানী ভেনেজুয়েলানদের প্রতি শক্ত মনোভাব পেরুর রাস্তায়ও শোনা যায়।

জিয়ানেলা হারামিজো, যিনি সীমান্তবর্তী এক শহরে ছোট একটি কাপড়ের দোকান চালান, এএফপিকে বলেন, ‘ভেনেজুয়েলার মানুষদের জন্য আমরা দুঃখিত। কিন্তু ওরা পেরুর নাগরিকদের থেকে কাজ কেড়ে নিচ্ছে।’

‘আরও মানুষকে সাহায্য করা কঠিন’
তাঁর কথা ইকুয়েডরের জেরার্দো গুতিয়েরেজের কণ্ঠেও শোনা যায়।

‘দুই ব্লক হাঁটলেই আপনি ১০ জন ভেনেজুয়েলানের দেখা পাবেন। আরও দুই ব্লক যান, আরও ১০ জন ভেনেজুয়েলানকে দেখবেন। অর্থনৈতিকভাবে গরিব দেশে এত অল্প সম্পদে আরও মানুষকে সাহায্য করা কঠিন।’

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) মুখপাত্র জোয়েল মিলমান বলেন, ‘এটি এমন একটি সংকট মুহূর্ত তৈরি করছে, যা আমরা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে দেখেছি, বিশেষ করে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায়।’

ইকুয়েডরে সেপ্টেম্বরে ১৩-দেশীয় আঞ্চলিক শীর্ষ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এই সংকট মোকাবিলায় আঞ্চলিক প্রচেষ্টার সমন্বয়ে একটি ইউএন দল গঠন করার কথা।