ভারতে চাইল্ড হেল্পলাইনে ৩ কোটি ৪০ লাখ কল

পরিসংখ্যানে প্রকৃত সংখ্যার হিসাব কখনো পাওয়া যায় না। তবে পরিস্থিতির বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। পারিবারিক অশান্তি বা সামাজিক নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতার অভাবে শিশুরা যে কতটা বিপন্ন বোধ করে, এর আভাস এই চিত্রে মিলবে।

শিশুদের সহায়তায় ভারতে একটি হেল্পলাইন রয়েছে। নম্বরটি হচ্ছে ১০৯৮। ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩ কোটি ৪০ লাখ কল এসেছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৩৬ লাখ কল ছিল নীরব। টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের খবরে জানানো হয়, ফোন করেও এসব কল ছিল নিশ্চুপ। এসব নীরব ফোন কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী থেকেছে। ফোনের ওপাশ থেকে নানা শব্দ শোনা গেলেও ফোন করে কেউ কথা বলেনি।

আজ শনিবার টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের খবরে জানানো হয়, এই নীরব কলের ব্যাপারে ধারণা করা হচ্ছে, হয়তো বিপদে পড়া কোনো শিশু বা শিশুদের হয়ে বড়দের কেউ ফোন করে সাহায্য চেয়েও শেষতক পারেননি। হয়তো সাহায্যের জন্য সেগুলো ছিল ‘নীরব কান্না’।

ভারতে নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে হেল্পলাইন বাস্তবায়ন করছে চাইল্ডলাইন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা।

এই নীরব ফোনগুলোকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাইল্ডলাইন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হারলিন ওয়ালিয়া।

এই সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুসারে, নীরব কলের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। ২০১৫-১৬ সালে নীরব কলের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। ২০১৬-১৭ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ লাখে। আর ২০১৭-১৮ সালে এ সংখ্যা আরও বেড়ে ৫৩ লাখে পৌঁছায়।

ধারণা করা যায়, নীরব কলগুলো শিশু বা বড়রা করে থাকতে পারেন। কোনো শিশু বিপদে বা কষ্টে রয়েছে—এই কল সেই আভাসই দেয়।

ওয়ালিয়া বলেন, প্রথম সেশনে বিপদে পড়া শিশুরা কথা বলতে চায় না। কাউন্সিলররা কথা বলে বলে তাদের আস্থা অর্জন করেন। এরপরই তারা কথা বলে। এই নীরব কলগুলো সে রকম কিছুই মনে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নিশ্চুপ শিশুগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে। হয়তো তারা সাহায্য চাইবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।

অনেক শিশু কল করে তাদের আবেগ-অনুযোগ নিয়ে সহায়তা চায়। এই শিশুদের বেশির ভাগই পারিবারিক দুর্দশায় থাকে। বাবা-মা পৃথক হয়ে গেছে, পরিবারে অশান্তি রয়েছে। এমনকি ধনী পরিবারগুলোর শিশুদের ফোন আসার সংখ্যা বাড়ছে। তবে ৩ কোটি ৪০ লাখ কলের মধ্যে মাত্র ছয় লাখের ক্ষেত্রে হেল্পলাইন ব্যবস্থা নিয়েছে। সংখ্যায় এটা খুব কম হলেও এ থেকে বোঝা যায়, কত বিপুলসংখ্যক শিশুর সাহায্যের প্রয়োজন হয়।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ফোন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনাও আগের চেয়ে বেড়েছে। ২০১৫-১৬ সালে ১ লাখ ৭০ হাজার, ২০১৬-১৭ সালে ২ লাখ ১০ হাজার এবং ২০১৭-১৮ সালে ২ লাখ ৩০ হাজার কলে ব্যবস্থা নিয়েছে হেল্পলাইন। ছয় লাখ কলের মধ্যে দুই লাখের ক্ষেত্রে মামলা হয়েছে ‘নির্যাতন থেকে সুরক্ষা’ ক্যাটাগরিতে। এর মধ্যে ৮১ হাজার ১৪৭টি মামলা হয়েছে শুধু ২০১৭-১৮ সালেই।