নিপীড়নের শিকার ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দেখা করবেন পোপ

পোপ ফ্রান্সিস আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে যাওয়ার পথে প্লেনে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন। ২৫ আগস্ট, ২০১৮। ছবি: রয়টার্স
পোপ ফ্রান্সিস আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে যাওয়ার পথে প্লেনে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন। ২৫ আগস্ট, ২০১৮। ছবি: রয়টার্স

রোমান ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস যাজকদের হাতে নিপীড়নের শিকার ভুক্তভোগী লোকজনের সঙ্গে দেখা করবেন। আয়ারল্যান্ড সফর শেষে তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করবেন। ভ্যাটিকান সিটি সময় ও স্থানের বিষয়টি উল্লেখ না করে জানিয়েছে, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়া হবে না।

আজ শনিবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, ভ্যাটিকান সিটি সময় ও স্থানের বিষয়টি উল্লেখ না করে জানিয়েছে, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়া হবে না।
পোপ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই আয়ারল্যান্ডে পোপ ফ্রান্সিসের প্রথম সফর। এর আগে ১৯৭৯ সালে পোপ হিসেবে দ্বিতীয় জন পল আয়ারল্যান্ড সফর করেছিলেন।
বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতি তিন বছর পরপর আনুষ্ঠানিকভাবে সমবেত হন। এটাই ক্যাথলিকদের সবচেয়ে বড় আয়োজন। এবার এ সভা অনুষ্ঠিত হবে আয়ারল্যান্ডে। আজ শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ডাবলিনের ক্রোক পার্ক স্টেডিয়ামে ক্যাথলিক পরিবারগুলোর কনসার্ট উৎসবে যোগ দেবেন পোপ। কাল রোববার ফিনিক্স পার্কে পাঁচ লাখ ক্যাথলিকের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই সভা শেষ হবে। এই সমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য দুদিনের সফরে আয়ারল্যান্ডে অবস্থান করবেন পোপ ফ্রান্সিস।
পোপ ফ্রান্সিস এমন এক সময়ে আয়ার‍ল্যান্ড সফরে এসেছেন, যখন বিশ্বব্যাপী যাজকের হাতে দশকের পর দশক ধরে চলতে থাকা শিশু নিপীড়নের ভয়াবহ সব তথ্য প্রকাশ হয়েছে। খোদ আয়ারল্যান্ডে যাজকদের হাতে শিশু নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে বহু।
এই সপ্তাহে বিশ্বের ১০০ কোটি ২০ লাখ ক্যাথলিকের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে পোপ ফ্রান্সিস গির্জার যাজকদের হাতে শিশু নিপীড়নের নৃশংসতা ও সেসব ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।

১৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড জুরির প্রতিবেদনে যাজকের হাতে শিশু নিপীড়নের ভয়াবহ তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের তিন শতাধিক যাজক সাত দশক ধরে এক হাজারের বেশি শিশুকে নির্যাতন করেছেন। দিনের পর দিন এসব ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে ক্যাথলিক চার্চ।

অস্ট্রেলিয়া থেকে লাতিন আমেরিকার কয়েকটি মহাদেশে ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়া যৌন হয়রানির ঘটনায় ওই সময়ে চাপের মুখে পড়েন পোপ ফ্রান্সিস। সময়-সময় যাজকদের এই বীভৎস পদস্খলনের ঘটনা তাঁর জন্য কঠিন পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক ক্যাথলিক দুশ্চিন্তায় ছিলেন, এসব ঘটনা মীমাংসা করতে না পারলে বিশ্বের নৈতিকতার প্রতীক হিসেবে পোপের সেবা সমালোচনার মুখে পড়তে পারে। পেনসিলভানিয়ার প্রতিবেদন প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টা পর ভ্যাটিকান দুঃখ প্রকাশ করে এক বিবৃতি দেয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ভুক্তভোগীদের জানা দরকার, পোপ তাঁদের পক্ষে রয়েছেন। যারা ঘটনার শিকার হয়েছে, তারা পোপের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

পোপ ফ্রান্সিসের আয়ারল্যান্ড সফরকে কেন্দ্র করে দ্য ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, খোদ আয়ারল্যান্ডের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের ডোনেগালেই যাজকদের হাতে শিশু নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। দশকের পর দশক ধরে চলা এসব নির্যাতনের কোনো বিচারই হয়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানের ১৪ জন যাজকের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে চারজন অভিযুক্ত হয়েছেন। অভিযুক্ত যাজকদের মধ্যে ইউগেন গ্রিনি নামে একজন যাজককে সবচেয়ে নৃশংস উল্লেখ করে বলা হয়, ১৯৬৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ২৬ জন ছেলেকে ধর্ষণ ও নিপীড়নের অভিযোগে তিনি ৯ বছর কারাদণ্ড ভোগ করেন।
এই বছর ডোনেগালের পাশের ডিওসেজে (ক্যাথলিক প্রশাসন এলাকা) বিশপ হিসেবে ফিলিপ বয়সেকে নিয়োগ দিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। ফাদার গ্রিনির ঘটনায় ফিলিপ বয়সে কঠোরভাবে সমালোচিত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, নব্বই দশকে তাঁর অধীনে থাকা ফাদার গ্রিনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ফিলিপ বয়েসে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।