ঘানায় ১৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হবেন কফি আনান

কফি আনান
কফি আনান

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর ঘানায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। দেশটির প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডো গত শুক্রবার এ কথা জানান। তিনি বলেন, কফি আনানের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও সমাহিত করার বিষয়টি তাঁর দেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

এএফপির খবরে বলা হয়, ঘানার রাজধানী আক্রায় কফি আনানের পরিবারের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডো। এরপরই তিনি জানান, কফি আনানকে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর ঘানায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। ঘানার নাগরিক ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আনান অসুস্থ হয়ে ১৮ আগস্ট ৮০ বছর বয়সে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

প্রেসিডেন্ট আকুফো-আডো বলেন, ‘কফি আনান ছিলেন বর্তমান প্রজন্মের সর্বাধিক কীর্তিমান একজন ব্যক্তি। তিনি ছিলেন একজন বড় ভাইয়ের মতো। আমি আশা করি, তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অনেক নেতাই উপস্থিত থাকবেন।’ তিনি জানান, আনানকে আক্রার নতুন সামরিক সমাধিস্থলে সমাহিত করা হবে।

ঘানার দক্ষিণাঞ্চলীয় আসান্তি এলাকার কুমাসি শহরে জন্ম কফি আনানের। কুমাসিতেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান আনান। মিনেসোটায় ম্যাকএলেস্টার কলেজে অর্থনীতিতে এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ব্যবস্থাপনায় ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি। জেনেভায়ও পড়ালেখা করেছেন।

১৯৬৫ সালে নাইজেরিয়ার তিতি আলাকিজাকে বিয়ে করেন আনান। এই দম্পতির আমা নামের একটি মেয়ে ও কোজো নামে একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। সত্তরের দশকে আনান ও আলাকিজার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘে সুইডিশ আইনজীবী ন্যানে লেগারগ্রেনকে বিয়ে করেন আনান।

জাতিসংঘের সঙ্গে চার দশক কাজ করেছেন কফি আনান। বিশ্ব সংস্থাটির কর্মীদের মধ্যে তিনিই প্রথম মহাসচিব হয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, জাতিসংঘের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ মহাসচিবও তিনি। ১৯৯৭ সালে মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর কফি আনান জাতিসংঘের সংস্কার এবং মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দিতে উদ্যোগী হন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ২০০১ সালে তাঁকে ও জাতিসংঘকে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ওই বছরই তিনি বাংলাদেশ সফর করেন। আত্মজীবনী ‘ইন্টারভেনশনস: আ লাইফ ইন ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এ কফি আনান লিখেছেন, জাতিসংঘকে এমনভাবে তিনি গড়তে চেয়েছিলেন, যাতে বিশ্ব সংস্থাটি কেবল সদস্যরাষ্ট্রগুলোর নয়, জনগণের স্বার্থ দেখবে।

কফি আনান মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের পক্ষে ছিলেন। কফি আনান ফাউন্ডেশন ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের কার্যালয় ২০১৬ সালে কফি আনানের নেতৃত্বে রাখাইন রাজ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিশন গঠন করে। এই কমিশন প্রায় এক বছর কাজ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়, যাতে রাখাইন সংঘাত বন্ধে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

২০০৬ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে জাতিসংঘের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন কফি আনান। এরপর তিনি সুইজারল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। সুইজারল্যান্ডের বার্নে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তাঁর মৃত্যুতে ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডো দেশটিতে সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন।