জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইউরোপে ঘাস কমছে, বিপাকে কৃষক
‘জুন মাস থেকেই আমাদের গরুগুলো দুরবস্থায় আছে, এখানে কোনো ঘাস নেই,’ কথাগুলো বলছিলেন জ্যঁ-গিইউম হ্যানকা। ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলের একজন কৃষক। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ বছরের গ্রীষ্মে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে খরা দেখা দিয়েছে। ঘাস জন্মাচ্ছে না আগের মতো। হ্যানকার মতো ইউরোপের অনেক কৃষকই এখন দুশ্চিন্তায় আছেন। ভাবছেন, আসছে শীতে কী খাওয়াবেন গবাদিপশুগুলোকে!
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ভূমধ্যসাগরের দেশগুলো অনেক দিন ধরেই কম বৃষ্টিপাতের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে। সেভাবেই বদল এসেছে কৃষিকাজ ও গবাদিপশু প্রতিপালনের পদ্ধতিতে। কিন্তু এ বছর ইউরোপজুড়ে যেভাবে খরার দাপট দেখা দিয়েছে, তাতে অপ্রত্যাশিত সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন কৃষকেরা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে কৃষকেরা এখন গবাদিপশুকে খাওয়াতে না পেরে পাঠাচ্ছেন কসাইখানায়!
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইউরোপের প্রায় সব দেশই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুইডেনে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দাবানল হতে দেখা গেছে। এর অন্যতম কারণ হলো এবারের গ্রীষ্মের উচ্চ তাপমাত্রা। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটির শস্য উৎপাদন প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে।
সুইডিশ বোর্ড অব অ্যাগ্রিকালচারের প্রধান অর্থনীতিবিদ হারাল্ড ভেনসন বলেন, ‘খাদ্যের অভাব মারাত্মক হয়ে দাঁড়াবে আসছে শীতে। বেশির ভাগ কৃষক গ্রীষ্মে উৎপাদিত খাবার জমিয়ে রাখেন শীতকালের জন্য।’
একই অবস্থা জার্মানিতেও। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানকার প্রতি ২৫টি ফার্মের একটি ব্যবসায়িক ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্যান্য বছর যে পরিমাণ শস্য উৎপাদিত হয়, এবার তার চেয়ে ৪০ শতাংশ কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, নেদারল্যান্ডসে গবাদিপশুর খাদ্যের উৎপাদন কমে যেতে পারে। ঘাটতি হতে পারে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ। শস্যের উৎপাদন কমতে পারে ২০ শতাংশ।
অন্যদিকে ইংল্যান্ডের সবুজ তৃণভূমি হ্রাস পেতে শুরু করেছে। দেশটির কৃষি বিভাগ জানাচ্ছে, গত ৮০ বছরে সেখানে এমন খরা আসেনি। আগস্ট মাস থেকে ফ্রান্সের বিভিন্ন এলাকায় দাবদাহ বইতে শুরু করেছে। দেখা দিয়েছে পশুখাদ্যের প্রচণ্ড অভাব। এতে করে বেড়ে গেছে খড়ের দাম।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপের দেশগুলো এখন কৃষকদের জন্য জরুরি সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে। জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স—সব দেশেই একই অবস্থা। ইউরোপীয় কমিশনও কৃষকদের জন্য ব্যতিক্রমী সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, খরার কারণে ইউরোপজুড়ে দুগ্ধজাত পণ্যের শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।