দুবাইয়ে মোশাররফের কোটি কোটি টাকার বাড়ি-গাড়ি

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ। ছবি: রয়টার্স
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ। ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের দেশের বাইরে দুবাইয়ের শহরতলিতে ৫৪ লাখ দিরহাম মূল্যের একটি বাড়ি রয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় এর দাম ১২ কোটি ২৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। রয়েছে আধুনিক মডেলের তিনটি গাড়ি।

গত মঙ্গলবার দেশটির প্রধান বিচারপতি সাকিব নিসারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চে জমা দেওয়া সম্পদের হলফনামায় এ তথ্য জানানো হয় বলে ডন অনলাইনের খবরে জানানো হয়।

লইয়ারস ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিসের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট ফিরোজ শাহ গিলানির করা এক আবেদনের শুনানির সময় পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এবং সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মালিক মোহাম্মদ কাইয়ুমের পক্ষে তাঁদের সম্পদের হলফনামা সুপ্রিম কোর্টের কাছে উপস্থাপন করা হয়। ওই আবেদনে মোশাররফ, জারদারি, কাইয়ুম এবং ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোকে বিবাদী করা হয়েছে।

২০০৭ সালের ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন অরডিন্যান্সের অপব্যবহারের মাধ্যমে বিবাদীরা জনগণের বিপুল পরিমাণ সম্পদ বেআইনিভাবে করেছেন। সেই সম্পদ উদ্ধারে আবেদনটি করা হয়।

আদালত শুনানি শেষে বিবাদীদের জমা দেওয়া হলফনামা প্রত্যাখ্যান করে দেশে ও দেশের বাইরে থাকা সব সম্পদের পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত তথ্য তিন সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে গত ১০ বছর ধরে দেশে ও বিদেশে থাকা সব ব্যাংক হিসাবের তথ্য জমা দিতে হবে। শুধু তাঁদেরই নয়, তাঁদের স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পদেরও হিসাব জমা দিতে হবে।

মোশাররফের সম্পদের বিবরণীতে বলা হয়, বাড়ির পাশাপাশি তাঁর ২০১৫ মডেলের মার্সিডিস রয়েছে, এর দাম ২ লাখ ৩০ হাজার দিরহাম। ২০১৭ মডেলের তাহো জিফ (মূল্য দেড় লাখ দিরহাম) ও ২০১৮ মডেলের চেভরোলেত ইমপালা রয়েছে, এর মূল্য ১ লাখ ৩০ হাজার দিরহাম।

বিদেশে তাঁর তিনটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এর পরিমাণ যথাক্রমে ৯২ হাজার ১০০ দিরহাম, ২১ হাজার ৫৫০ পাউন্ড ও ২ লাখ ৬৮ হাজার ৬৫৩ দিরহাম।

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। ছবি: রয়টার্স
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। ছবি: রয়টার্স

‘পুরো চাকরিজীবনের বেতন দিয়ে দুবাইয়ে ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব কি না’—প্রধান বিচারপতি জানতে চাইলে কৌঁসুলি বলেন, প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে যাওয়ার পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় অতিথি হিসেবে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। সেই আয় থেকে এ সম্পদ করা হয়েছে। কিন্তু বক্তব্য দিয়ে এত অর্থ পাওয়া সম্ভব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি মোশাররফকে আদালতে হাজির হয়ে নিজের সম্পদের বিবরণ দিতে বলেছেন।

প্রধান বিচারপতি ইসলামাবাদের শহরতলি চাক শাহজাদে ফার্ম হাউসের মালিক কে, তা জানতে চাইলে আইনজীবী তা মোশাররফের বলে জানান। তখন আদালত মোশাররফ ও তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা সব সম্পদের হিসাব তিন সপ্তাহের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

জারদারির আইনজীবী ফারুক এইচ নায়েক আদালতকে বলেন, পিপিপির কো-চেয়ারম্যান নয় বছর কারাভোগ করেছেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধ কিছুই প্রমাণিত হয়নি। তিনি মনে করেন, নয় বছর কারাভোগের কারণে জারদারির কিছু ছাড় পাওয়া উচিত। জবাবে আদালত বলেন, সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে ছাড়পত্র থাকলেই কেবল তিনি পুরস্কৃত হতে পারেন। আর কারভোগ করলেই যে সম্পদের তথ্য জমা দেওয়া থেকে ছাড় পাওয়া যাবে, তা নয়।

বিচারপতি ইজাজুল আহসান বলেন, রাজনীতিকেরা নিজের ওপর আরোপিত ‘কলঙ্ক সরানোর’ সুযোগ পাবেন। আদালত জানতে চান, জারদারির নিজের নামে বা তাঁর প্রয়াত স্ত্রী বেনজির ভুট্টো, সন্তানদের নামে সুইজারল্যান্ডে কোনো ব্যাংক হিসাব আছে কি না। জবাবে নিক বলেন, জারদারির সঙ্গে কথা বলে তিনি জানাবেন।

গত মঙ্গলবার জমা দেওয়া সম্পদের তথ্যবিবরণীতে জারদারি বলেছেন, পাকিস্তানের বাইরে তাঁর স্থাবর বা অস্থাবর কোনো সম্পদ নেই।