ইরাকের বসরায় কারফিউ জারি, বাগদাদে মর্টার হামলা

বসরায় গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারি সেবার অব্যবস্থাপনা নিয়ে বিক্ষোভ হয়। ছবি: এএফপি
বসরায় গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারি সেবার অব্যবস্থাপনা নিয়ে বিক্ষোভ হয়। ছবি: এএফপি

ইরাকের রাজধানী বাগদাদের সুরক্ষিত গ্রিন জোনে আজ শুক্রবার ভোরে তিনটি মর্টার শেল ছোড়া হয়েছে। সরকারি পরিষেবার দুরবস্থা নিয়ে ইরাকের বসরা প্রদেশে নতুন করে বিক্ষোভ চলাকালে ১ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় সেখানে পুনরায় কারফিউ জারি করার পর এ হামলার ঘটনা ঘটল।

আজ এএফপির খবরে জানানো হয়, বাগদাদের কড়া নিরাপত্তার গ্রিন জোন বা সুরক্ষিত এলাকায় কারা হামলা চালিয়েছে, তা শনাক্ত করা যায়নি। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও মার্কিন দূতাবাসের ভবন রয়েছে ওই এলাকায়। সেখানে এ ধরনের হামলা চালানোর ঘটনা বিরল। রাজধানীর নিরাপত্তাপ্রধান বলেন, হামলায় কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

দেশটির তেলসমৃদ্ধ দক্ষিণাঞ্চল বসরায় জুলাই থেকে বিক্ষোভ চলে আসছে। দূষিত পানির কারণে ৩০ হাজার মানুষের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে বিক্ষোভ ফুঁসে ওঠে। এই বিক্ষোভ পুরো ইরাককে কাঁপিয়ে দিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে গত মঙ্গলবার থেকে সেখানে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিক্ষোভের সময় প্রাদেশিক সরকারের সদর দপ্তরে মলোটভ ককটেল বা পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

তুলনামূলকভাবে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে এলে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে জারি করা কারফিউ গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তুলে নেয়। এরপরই আবারও হাজার হাজার বিক্ষোভকারী বসরার কেন্দ্রে সমবেত হয়। প্রাদেশিক সরকারের সদর দপ্তর ও রাজনৈতিক সংস্থাগুলোর কার্যালয়ে হামলার পর নতুনভাবে কারফিউ জারি হয়। এরপর ইরাকের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেইফ আল-বদর বিস্তারিত কোনো তথ্য না দিয়ে এক বিবৃতিতে জানান, বিক্ষোভে একজন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৪ জন বেসামরিক লোক ও ১১ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।

বসরায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ছিল বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে। সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। তবে এই আগুন নতুন হামলার কারণে নাকি আগের হামলার সময়ের আগুন কর্তৃপক্ষ নেভাতে ব্যর্থ হয়েছে, তা স্পষ্ট হয়নি।

গত ৮ জুলাই থেকে বসরায় শুরু হওয়া বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের দিকে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবর্ষণের অভিযোগ করেছেন ডানপন্থী অধিকারকর্মীরা। অপরদিকে সরকার বিক্ষোভে উসকানির অভিযোগ এনে বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণনাশী গুলি ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া আছে।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তাঁরা সরকারি পরিষেবা, পানি, বিদ্যুৎ ও চাকরি চান।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদির সরকার জানিয়েছে, ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলে অবকাঠামো ও বিভিন্ন সেবা উন্নয়নে শত কোটি ডলারের জরুরি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তবে গত মে মাসে নির্বাচনের পর দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক হয়ে যাওয়ায় এই সব প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে অবিশ্বাস রয়েছে সাধারণ জনগণের মনে।
ওই নির্বাচনে ব্যাপক আসনে জয় পেয়েছে শিয়া সম্প্রদায়ের নেতা মকতাদা সদরের রাজনৈতিক ব্লক। তিনি বিক্ষোভকারীদের দাবির বিষয়গুলো চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ পার্লামেন্টারি সেশনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে এ বৈঠকে রাজনীতিকদের অবশ্যই উপস্থিত থাকা উচিত, তা না হলে তাঁদের পদত্যাগ করা উচিত।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও বসরা প্রদেশের দাবিদাওয়া নিয়ে তিনি পার্লামেন্টারি সেশনের বৈঠকে মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বসতে প্রস্তুত। ভবিষ্যতে মকতাদা সদরের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠনে নিজের পদ রক্ষায় আবাদি তৎপর বলে শোনা যায়। একসময়ের মিলিশিয়াপ্রধান আবাদিকে বলা হয়, তিনি প্রতিবেশী ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের হাত থেকে ইরাকের বৃহৎ রাজনৈতিক স্বাধীনতা এনেছেন।