হৃদ্যন্ত্রের বয়স মাপা ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি নির্ণয়ের পরীক্ষা

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)

যাঁদের বয়স ৩০ বছরের বেশি, তাঁদের হৃদ্‌যন্ত্রের বয়স নির্ণয়ে একটি অনলাইন পরীক্ষার সুযোগ দিচ্ছে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড। অনলাইনে দরকারি তথ্য জানিয়ে ওই পরীক্ষা করলে হৃদ্‌যন্ত্রের বয়স জানা যাচ্ছে। হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি সম্পর্কে ওই পরীক্ষার ফল একটা ধারণা দিতে পারে।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গবেষকেরা বলছেন, হৃদ্‌যন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখলে ৭৫ বছরের কম বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি রোধ করা সম্ভব। গবেষকেরা পূর্বাভাসে বলছেন, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি অকালমৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়েন। এ জন্য ধূমপান বর্জন করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও যথেষ্ট ব্যায়াম করা উচিত।

অবশ্য ওই পরীক্ষাকে কোনো রোগ নির্ণয়ের উপায় বলা হচ্ছে না। এর মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা যায়। এতে স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনার বিষয়টি বোঝা যাবে।

৫৯ বছর বয়সী ডেডিড গ্রিন এ পরীক্ষা করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ‘বাজে ব্যাপার হলো আমার হৃদ্‌যন্ত্রের বয়স ১০ বছর বেশি দেখাচ্ছে এবং প্রত্যাশিত আয়ু কম দেখাচ্ছে। এটা আমার জন্য মেনে নেওয়া কঠিন হলেও এটি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছি। বিষয়টি পরিবর্তন করার জন্য কিছু একটা করতে হবে।’

ডেভিড বলেন, তিনি কখনো হৃদ্‌যন্ত্রের বয়সের কথা শোনেননি। তিনি ভেবেছিলেন, হৃদ্‌যন্ত্র খুব বেশি হলে দুই-তিন বছরের বেশি বয়সী হবে। কিন্তু তিনি পরীক্ষা করে দেখেন, তা এক দশকের বেশি হয়ে গেছে।

ডেভিড আরও বলেন, ‘তারা আমাকে জানাচ্ছে, আমার কিছু করা উচিত, যাতে আমি আরও বেশি দিন আমার পেনশন ভোগ করতে পারি। আমার কাছে এটাই এখন আসল। আমি কেবল অবসরে গেলাম। আমি আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই।’

মেদ জমা, অস্বাস্থ্যকর খাবার, যথেষ্ট ব্যায়ামের অভাব ও উচ্চ রক্তচাপ হৃদ্‌রোগের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে, যা পরিবর্তন করা সম্ভব।

কীভাবে তা পরিবর্তন করতে পারেন? যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) পরামর্শ হচ্ছে, এ জন্য আপনাকে ধূমপান ছাড়তে হবে। শারীরিকভাবে সক্রিয় হতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার বা ফাইবার খেতে হবে। সম্পৃক্ত চর্বিজাতীয় খাবার ছাড়তে। যথেষ্ট সবজি ও ফল খেতে হবে। লবণ খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। মাছ খেতে হবে। অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকতে হবে। প্যাকেটজাত খাবার গ্রহণে সতর্ক হতে হবে।

এনএইচএস ইংল্যান্ডের ওই পরীক্ষায় ২০ লাখের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন। এতে দেখা গেছে, ৭৮ শতাংশ মানুষের হৃদ্‌যন্ত্রের বয়স তাঁদের প্রকৃত বয়সের চেয়ে বেশি। এতে অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ মানুষের হৃদ্‌যন্ত্রের বয়স তাঁদের প্রকৃত বয়সের চেয়ে ৫ বছর বেশি আর ১৪ শতাংশের বয়স ১০ বছর বেশি।

যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর হার্টঅ্যাটাক বা স্ট্রোকে ৮৪ হাজার মানুষ মারা যান।

এনএইচএসের গবেষক ম্যাট কেয়ারনি বলেছেন, পরীক্ষাটি লাখো মানুষকে সাহায্য করার সম্ভাবনা আছে। এ পরীক্ষার কাজে সহযোগিতা করছে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন ও স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন।

ওই পরীক্ষায় জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তনের পরামর্শও দেওয়া হয়। এতে ১৬টি সহজ শারীরিক ও জীবনযাপন-বিষয়ক প্রশ্ন করা হয় এবং হৃদ্‌যন্ত্রের বয়সের ধারণা করা হয়। কোন বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে, তার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ধূমপান ছাড়ার এক বছর পরে একজন ব্যক্তির হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি ধূমপায়ীদের চেয়ে অর্ধেক কমে যায়। সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের বেশি পরিমিত ব্যায়ামের পরামর্শও দেওয়া হয়। এ ছাড়া নিয়মিত শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।