প্রতারকদের তালিকা পাঠিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে: রঘুরাম রাজন

রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন। ছবি: রয়টার্স
রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন। ছবি: রয়টার্স

রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন বলেছেন, উচ্চপর্যায়ের জালিয়াতির ঘটনাগুলোর তালিকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ওই বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

ভারতের পার্লামেন্টারি প্যানেলের কাছে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ কথা লিখেছেন রঘুরাম রাজন। ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম আজ মঙ্গলবার এ বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে।

সরকারি ওই প্রতিবেদনে রঘুরাম রাজন লিখেছেন, উচ্চপর্যায়ের জালিয়াতি বা প্রতারণার ঘটনাগুলোর তালিকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যালয়ে তিনি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ওই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, সরকারি প্রতিবেদনে রঘুরাম রাজনের এই বক্তব্যে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে ভারতে। কিছুদিন আগেই জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী মোদির নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রকৃত উদ্দেশ্য হাসিল হয়নি। মোট যে মূল্যমানের নোট বাতিল করা হয়েছিল, তার প্রায় ৯৯ শতাংশই সরকারের কাছে ফেরত এসেছে। অথচ নোট বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার সময় নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, দেশ ও সমাজবিরোধী এবং চোরাকারবারিদের পথে বসাতেই নাকি নোট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে মজার বিষয় হলো, বিজেপি নাকি কংগ্রেস—ঠিক কোন সরকারের আমলে তৈরি খারাপ ঋণ সম্পর্কে রঘুরাম রাজন এই পর্যালোচনা করেছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মোট তিন বছরের জন্য গভর্নর ছিলেন রঘুরাম। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি আরবিআইয়ের গভর্নর ছিলেন।

যে পার্লামেন্টারি প্যানেলের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন রঘুরাম রাজন, সেই প্যানেলের প্রধান ছিলেন বিজেপির নেতা মুরলি মনোহর যোশি। তাঁকে দেওয়া প্রতিবেদনে রঘুরাম লিখেছেন, খারাপ ঋণের মূল কারণ অতি আশাবাদী ব্যাংকার, সরকারের সদিচ্ছার অভাব এবং ধীরগতির প্রবৃদ্ধি। সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকিং খাতে জালিয়াত ও প্রতারকদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

প্রতিবেদনে রঘুরাম আরও লিখেছেন, ‘যখন আমি গভর্নর ছিলাম, তখন প্রতারণা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি সেল গঠন করেছিল আরবিআই। এই সেলের কাজ ছিল প্রতারণার ঘটনাগুলো সম্পর্কে আগেভাগেই তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে প্রতিবেদন পাঠানোর কাজে সমন্বয় করা। উচ্চপর্যায়ের এমন কিছু ঘটনার তালিকা আমি নিজেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম। আরজি জানিয়েছিলাম যেন এ ধরনের ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয় করতে দেওয়া হয়। বিষয়টির আর কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না, তা আমি জানি না। এটি এমন একটি বিষয়, যা জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনা করা উচিত ছিল।’

রঘুরামের বক্তব্য, দুর্ভাগ্যজনকভাবে পুরো ব্যবস্থায় একজন উচ্চপর্যায়ের প্রতারককেও হাতেনাতে ধরতে পারেনি। ফলে প্রতারণা নিরুৎসাহিত হয়নি। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সাবেক গভর্নরের মতে, কংগ্রেস বা বিজেপি—উভয় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বাধীন সরকারই এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে অনেক সময় নিয়েছে।

এদিকে রঘুরাম রাজনের এই বক্তব্য নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক শিবিরে শুরু হয়েছে কথার লড়াই। কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়ই পরস্পরকে দোষারোপ করছে। কংগ্রেস বলছে, রঘুরাম প্রধানমন্ত্রী মোদি ও তাঁর কার্যালয়কেই নির্দেশ করেছেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা বলছেন, কংগ্রেস আমলের দুর্নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে রঘুরামের এই বক্তব্য।

রঘুরাম রাজনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০০৬ থেকে ২০০৮—এই দুই বছরে বিশালসংখ্যক ঋণ আদায় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তিনি বলেছেন, ওই সময় ব্যাংকগুলো অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

রঘুরাম বলেছেন, ব্যাংকাররা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন এবং ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তদন্ত চালাননি। কেউ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ দেননি। নিজের লেখা প্রতিবেদনে আরবিআইয়ের সাবেক গভর্নরের পরামর্শ, সরকারি ব্যাংক খাতের পরিচালন ব্যবস্থায় উন্নতি আনতে হবে এবং এ জন্য সরকার থেকে ব্যাংকের দূরত্ব বাড়াতে হবে।