মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আশা থেকে নিরাশায়

আইজ্যাক রবিন ও ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে বিল ক্লিনটন। ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩, হোয়াইট হাউসে।  এএফপি (ফাইল ছবি)
আইজ্যাক রবিন ও ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে বিল ক্লিনটন। ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩, হোয়াইট হাউসে। এএফপি (ফাইল ছবি)

১৯৯৩ সাল। চির বৈরী ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নরওয়ের অসলোতে গোপন বৈঠক হয়। এর সূত্র ধরে ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তিতে সই করেন ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত ও সেই সময়ের ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন। ঐতিহাসিক ওই চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি আজ।

দীর্ঘ ২৫ বছর আগের ওই চুক্তিতে বোঝাপড়া হয়েছিল, ফিলিস্তিনিরা স্বশাসনের আংশিক অধিকার পাবে এবং ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে। বদলে ইসরায়েলি রাষ্ট্রের বৈধতা স্বীকার করে নেবে পিএলও। ফিলিস্তিনিরা রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের স্বীকৃতি মানতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের প্রকৃত স্বশাসনের দেখা মেলেনি। স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণ তো দূরের কথা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, চুক্তি সইয়ের পর আরাফাত-রবিন হাত মেলানোর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন কয়েক দশকের সংঘাতের অবসান এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে আশার সঞ্চার হয়েছিল, দিন দিন তা নিরাশায় পরিণত হয়েছে।

চুক্তির নেপথ্যে তিন ব্যক্তি ইয়াসির আরাফাত, আইজ্যাক রবিন ও ইসরায়েলের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিমন পেরেজ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে পরে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

আড়াই দশক আগে আজকের এই দিনটিতে হোয়াইট হাউসের লনে অসলো শান্তিচুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রায় তিন হাজার আমন্ত্রিত অতিথি। তাঁরা প্রত্যক্ষ করেন কীভাবে পুরোনো দুই শত্রু বিভেদ ভুলে সম্প্রীতির বন্ধনে হাতে হাত রাখেন। সম্প্রীতির ওই যাত্রায় প্রথমে হাত বাড়িয়েছিলেন ইয়াসির আরাফাত। খানিকটা ইতস্তত করলেও পরে রবিন হাত বাড়ান।

ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও ফিলিস্তিনিদের বঞ্চনার অবসানে একে এক বড় ধরনের মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা হিসেবে মনে করা হচ্ছিল। যদিও ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল এবং আরব দেশের ভেতর এর কিছু সমালোচনাও শুরু হয়।

১৯৯৪ সালের মেতে ফিলিস্তিনে অন্তর্বর্তীকালীন স্বশাসন শুরু হয়। দুই মাস পর ২৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে নিজ ভূখণ্ডে ফেরেন আরাফাত। গঠন করেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পথ তৈরি ও এর দেখভালের দায়িত্ব পায় এই কর্তৃপক্ষ। পরের বছর সেপ্টেম্বরে এক নতুন মধ্যবর্তী চুক্তি সই হয়, যা অসলো-২ নামে পরিচিত। এর লক্ষ্য ছিল পশ্চিম তীরে স্বশাসনের পরিধি বাড়ানো। কিন্তু ৪ নভেম্বর ১৯৯৫ চুক্তির বিরোধিতাকারী উগ্রপন্থী ইহুদিবাদী একটি সংগঠনের পক্ষে আইজ্যাক রবিনকে হত্যা করা হয়। চুক্তি বাস্তবায়নে এটি ছিল এক বিরাট ধাক্কা। ২০০০ সালে শুরু হয় দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা।

এমন আশা-নিরাশার ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে এক নতুন সমঝোতা শুরু হয়। তবে সর্বশেষ সরাসরি এই সমঝোতা কোনো ফল বয়ে আনেনি। ২৫ বছর আগে অসলো চুক্তি যেখানে ছিল, তা সেখানেই পড়ে আছে। পশ্চিম তীর এখনো দখলীকৃত ভূখণ্ড ও গাজা উপত্যকা ইসরায়েলি দখলদারদের অবরোধের মধ্যেই পড়ে আছে।