মালিয়াকে নিয়ে রাজনীতি সরগরম

বিজয় মালিয়া
বিজয় মালিয়া

দেশত্যাগী ব্যবসায়ী ও সাবেক সাংসদ বিজয় মালিয়াকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনীতি নতুনভাবে সরগরম হয়ে উঠেছে। মালিয়ার দেশত্যাগের পেছনে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির হাত ছিল বলে সরাসরি অভিযোগ এনেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, জেটলির সঙ্গে দেখা করে মালিয়া যখন দেশত্যাগের কথা জানান, অর্থমন্ত্রী তখন কেন সিবিআই বা আর্থিক তদন্তে নিযুক্ত সংস্থাদের সজাগ করে দেননি? কেন তিনি একজন অপরাধীকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিলেন?

রাহুলের আরও প্রশ্ন, মালিয়ার বিরুদ্ধে ‘লুক আউট নোটিশ’ বদলে কেন সরকারকে ‘জানানোর নির্দেশ’ জারি করা হয়েছিল? কোন যুক্তিতে এবং কার নির্দেশে? সেই জবাবও সরকারকে দিতে হবে।

ব্যবসায়ী-সাংসদ বিজয় মালিয়া ছিলেন ‘কিংফিশার’ এয়ার লাইনসের মালিক। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কাছে ৯ হাজার কোটি রুপি অনাদায়ি রেখে তিনি ২০১৬ সালের ২ মার্চ দেশ ছাড়েন। সেই থেকে তিনি লন্ডনে রয়েছেন।

তাঁকে প্রত্যার্পণের দাবি জানিয়েছে ভারত। লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা চলছে। দেশে তাঁর বিভিন্ন সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গত বুধবার লন্ডনে মালিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চলে আসার আগে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দেনা-পাওনা মেটানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এ কথাও বলেছিলাম, আমি লন্ডন চলে যাচ্ছি।’ মালিয়ার এই মন্তব্যের পর জেটলি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মালিয়ার সঙ্গে তিনি কোনো বৈঠক করেননি। ‘সংসদ ভবনে সামান্য সময়ের জন্য কাছে এসে তিনি ওই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ওঁর ভাঁওতায় আমি কান দিইনি। ওঁর কাছ থেকে কোনো কাগজপত্রও নিইনি। মালিয়াকে বলেছিলাম, ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলতে।’

বৃহস্পতিবার দিনভর ভারতীয় রাজনীতি এ নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে। প্রথম আক্রমণ আসে বিজেপির কাছ থেকে। দলীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র অভিযোগ করেন, কিংফিশার এয়ারলাইনসের আসল মালিক সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী। কিংফিশারকে বাঁচাতে ২০০৮ ও ২০১২ সালে দুবার ওই কোম্পানির ঋণ কাঠামোর রদবদল ঘটানো হয়। এই অভিযোগের আধা ঘণ্টার মধ্যেই সংবাদ সম্মেলন করেন রাহুল গান্ধী। দলীয় দপ্তরে তিনি বলেন, জেটলির সঙ্গে মালিয়া যে দেখা করেছিলেন এবং তা মোটেই ৩০ সেকেন্ডের জন্য নয়, তার প্রমাণ দেবেন সাংসদ পি এল পুনিয়া। রাহুলের পাশে বসা রাজ্যসভার সদস্য পুনিয়া বলেন, ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ হয়। পরের দিন ১ মার্চ সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলের এক কোনায় দাঁড়িয়ে জেটলির সঙ্গে মালিয়াকে কথা বলতে দেখা যায়। তারপর তাঁরা আসনে বসেও কথা বলেন। পরের দিন মালিয়া দেশত্যাগ করেন। ৩ মার্চের খবরের কাগজে তা জানাজানি হয়। পুনিয়া বলেন, সেন্ট্রাল হলের সিসিটিভি দেখলেই এর সত্যতা প্রমাণিত হবে।

এরপরই রাহুলের প্রশ্ন, জেটলিকে মালিয়া বলেছিলেন পরের দিন লন্ডন চলে যাবেন। দেশত্যাগের ওই খবর তিনি কেন সিবিআইকে জানালেন না? কিংবা আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তকারী সংস্থাকে? জানালেও ওই সব সংস্থা কেন ব্যবস্থা নেয়নি। কেন তিনি এক অপরাধীকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে সাহায্য করলেন?

বিচারের জন্য বিজয় মালিয়াকে ভারত ফেরত পাবে কি না, তা নির্ভর করছে লন্ডনের আদালতের ওপর। ভারতীয় জেলখানার অবস্থা কেমন তার একটা ভিডিও ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে পেশ করা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর মামলার রায় বেরোবে।