পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া ভোটব্যাংকে বিজেপির থাবা!

আগামী লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া সম্প্রদায়ের সমর্থন নিতে সচেষ্ট বিজেপি।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া সম্প্রদায়ের সমর্থন নিতে সচেষ্ট বিজেপি।

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে অনেক দিন ধরেই। উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে অবস্থিত মতুয়া সম্প্রদায়ের সংঘ গুরুর আশ্রম। ফলে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, গাইঘাটা, নদীয়াসহ পশ্চিমবঙ্গের আরও কয়েকটি এলাকায় ভোট নির্ণায়ক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত এখনো মতুয়ারা। রাজ্যের বিজেপি নেতারা এখন সেই মতুয়াদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সম্প্রদায়ের মহাসংঘের সংঘাধিপতি হলেন মা বীণাপাণি দেবী। প্রতিদিন কেন্দ্রীয় আশ্রমে ভক্তদের ভিড় জমে। তাঁরা আসেন বীণাপাণি দেবীর আশীর্বাদ নিতে।

আগে ধর্মকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও দিনে দিনে রাজনীতিতে ঝোঁক বাড়ছে মতুয়া সম্প্রদায়ের। বীণাপাণি দেবীর দুই ছেলেই একসময়ে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীণাপাণি দেবীর আশীর্বাদ নিতে হাজির হয়েছিলেন ঠাকুরনগর আশ্রমে। এ ছাড়া রাজ্যের মন্ত্রীরাও প্রায়ই দর্শন করেন বড়মার।

বীণাপাণি দেবীর বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর ২০১৪ সালে তৃণমূলের টিকিটে বনগাঁ কেন্দ্র থেকে হয়েছিলেন সাংসদ। তবে সাংসদ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে তাঁর অকস্মাৎ মৃত্যু হয়। এরপরে তাঁর শূন্য আসনে উপনির্বাচনে স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুর তৃণমূলের মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ হন। এখনো তিনি তৃণমূলের সাংসদ।

অন্যদিকে ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর গাইঘাটা কেন্দ্র থেকে হয়েছিলেন বিধায়ক। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মঞ্জুলকৃষ্ণ জয়ী হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভার উদ্বাস্তু-সংক্রান্ত প্রতিমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে পরে তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। অবশ্য এরপর তিনি আবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তবে ফিরে পাননি তাঁর সম্মান।

রাজ্য বিজেপি মতুয়াদের পক্ষে নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। মতুয়াদের মনে তারা এমন একটি ধারণা এনে দিচ্ছে যে, তাদের সব সমস্যার সমাধান করে দেবে বিজেপি। একদিকে নাগরিকত্ব থেকে সার্বিক সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছে তারা, অন্যদিকে মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাঙন ধরানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি। ইতিমধ্যে ঠাকুরনগরে মতুয়া মহাসংঘের সমর্থকদের মধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেকেই ঠাকুরবাড়ির ওপর বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। এরই ফলে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে মতুয়াদের মধ্যে। এর সুযোগ নেয় বিজেপি। বিজেপির আহ্বানে গত বুধবার ৩০০ মতুয়া কলকাতায় বিজেপির রাজ্য কার্যালয়ে গিয়ে যোগ দেন দলটিতে। হাতে তুলে নেন বিজেপির পতাকা। একই দিন আরও ২০০ বৈষ্ণব সন্ন্যাসীও যোগ দেন বিজেপিতে।

মতুয়াদের এই বিপুলসংখ্যক সদস্যের বিজেপিতে যোগদানের ঘটনায় কপালে ভাঁজ ফেলেছে তৃণমূলের নেতাদের। আগামী বছর ভারতের লোকসভা নির্বাচন। এর আগে এই বিপুলসংখ্যক মতুয়ার বিজেপিতে যোগদান দলটিকে আরও চাঙা করে তুলেছে।

বিজেপির রাজ্য সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, এবার থেকে মতুয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে থাকবে বিজেপি। তাদের দাবিদাওয়া পূরণ করার জন্য দল কাজ করে যাবে।

বিজেপির সহসভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী বলেছেন, আজ যেসব মতুয়া ও বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ভক্তরা বিজেপিতে যোগ দিলেন, তাঁদের মাসিক অবসরভাতা এবং তীর্থস্থান বিনা ভাড়ায় ভ্রমণের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেবে বিজেপি।

বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘মতুয়ারা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়; আমরাও ছিনিয়ে আনতে পারি। আগামী লোকসভা নির্বাচনে এভাবেই আমরা মমতার মুখের গ্রাস ছিনিয়ে আনব।’

যোগদানকারী ব্যক্তিদের মধ্যে মতুয়া নেতা কিশোর বিশ্বাস ও কমল গোঁসাই বলেছেন, তাঁরা ঠাকুরবাড়ির বিক্ষুব্ধ অংশের সমর্থক। মতুয়াদের অনেকেই এখন ঠাকুরবাড়ির কার্যকলাপের ওপর ক্ষুব্ধ। তাঁরা ধীরে ধীরে যোগ দেবেন বিজেপিতে। আরও আরও বলেন, ‘আমরা ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এভাবেই তৃণমূলের গ্রাস কেড়ে নেব।’