বাংলাদেশের ওপর দায় চাপালেন সু চি

>
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি।

• গত বছরের ২৫ আগস্ট হামলার জেরে রাখাইনে অভিযান শুরু
• প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে
• রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নভেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি মিয়ানমারের
• এখনো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি
• মিয়ানমারের অনীহাকে দুষেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার দায় বাংলাদেশের ওপর চাপিয়েছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ‘প্রস্তুত না থাকায়’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি।

সু চি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কবে মিয়ানমারে ফিরবে, সে ব্যাপারে আমরা একা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’

গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার জেরে সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। তারা অভিযোগ করেছে, মিয়ানমারের সেনারা রোহিঙ্গা গ্রামগুলোয় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ চালিয়েছে।

জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের ওপর হওয়া নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী মিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংসহ জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে।

তবে মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গত নভেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে দেশটির সরকার। সে অনুযায়ী গত জানুয়ারি মাসে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। এর জন্য মিয়ানমারের অনীহাকেই দুষেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

হ্যানয়ের সম্মেলনে সু চি স্বীকার করেন, রাখাইনের পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে সামাল দেওয়া যেত। তিনি বলেন, পরিস্থিতি ভালোভাবে সামাল দেওয়ার আরও উপায় অবশ্যই ছিল। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়া ন্যায়সংগত হয়েছে বলে অভিমত দেন তিনি। তিনি বলেন, সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সোয়ে ওওকে (২৮) তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়নি। আদালত জানিয়েছেন যে তাঁরা রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন ভেঙেছেন। উন্মুক্ত আদালতে ওই দুই সাংবাদিকের বিচার হয়েছে।

এদিকে রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মুঘেরিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গতকাল বলেন, দুই সাংবাদিকের বিচারপ্রক্রিয়াটি অনেক পর্যবেক্ষকের কাছে ছিল মিয়ানমারে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিয়ে একটি পরীক্ষা। পরিষ্কারভাবেই এই পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠক বসবে। মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, ওই বৈঠকে মিয়ানমার আলোচনায় থাকলেও উপস্থিত থাকবেন না সু চি।