নর্থ ক্যারোলাইনায় ফ্লোরেন্সের আঘাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫

হারিকেন ফ্লোরেন্সের আঘাতে গাছ উপড়ে বাড়িটির ওপর পড়লে মা ও শিশু মারা যায়। ছবি: এএফপি
হারিকেন ফ্লোরেন্সের আঘাতে গাছ উপড়ে বাড়িটির ওপর পড়লে মা ও শিশু মারা যায়। ছবি: এএফপি

প্রচণ্ড শব্দে তিনি দৌড়ে দরজার কাছে যান। দেখার চেষ্টা করেন কী হয়েছে। চারদিক তখন অন্ধকার। কেবলই বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এর পরের এক ঘণ্টা কীভাবে কেটেছে, জানেন না। ঘণ্টাখানেক পর বাড়ির সামনে দমকল বাহিনীর ট্রাক দেখে বুঝতে পারলেন খুব খারাপ কিছু ঘটেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর নগরী উইলমিংটনের বাসিন্দা অ্যাডাম স্পার্কস তখনো জানতেন না, তিনি যখন যন্ত্রণায় ছটফট করছেন, তখন বাড়ির আরেক প্রান্তে নিথর হয়ে পড়ে রয়েছে প্রাণপ্রিয় স্ত্রী ও শিশু সন্তান।

এএফপির খবরে জানানো হয়, স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য নর্থ ক্যারোলাইনায় আঘাত হানে হারিকেন ফ্লোরেন্স। এর আগে বেশির ভাগ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলেও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থেকে যান অ্যাডাম। এর মাশুল তাঁকে গুনতে হলো প্রিয় মানুষদের হারিয়ে। প্রচণ্ড ঝড়ে গাছ উপড়ে তাঁর বাড়ির ওপর পড়লে স্ত্রী ও সন্তানের মৃত্যু হয়। অ্যাডামকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন দমকল বাহিনীর লোকজন। বাড়ির ভেতর থেকে মা ও সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

অ্যাডাম বলেন, ‘আমার প্রায় সব প্রতিবেশীই বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গিয়েছিল। শুধু আমার পরিবারসহ অল্প কয়েকজন বাড়িতেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’

লাল ইটের ছোট্ট বাড়িটির সামনে থেকে বোঝার উপায় নেই যে এত বড় বিপর্যয় ঘটে গেছ! সামনের দিকে বাড়িটি অক্ষত থাকলেও পেছনের প্রায় পুরোটাই বিধ্বস্ত। গাছ উপড়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেছে।

পরে উইলমিংটন পুলিশ নিশ্চিত করেছে, ফ্লোরেন্সের প্রথম শিকার এই মা ও মেয়ে। এরপর ঝড়ের আঘাতে পৃথক স্থানে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

হারিকেন ফ্লোরেন্সের আঘাতে গাছপালা উপড়ে পড়ে, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ছবি: রয়টার্স
হারিকেন ফ্লোরেন্সের আঘাতে গাছপালা উপড়ে পড়ে, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ছবি: রয়টার্স

বাড়িটি হলুদ ফিতা দিয়ে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। দমকল বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হারিকেন ফ্লোরেন্স শুরু হওয়ার আগে উপকূল যেসব এলাকা থেকে লোকজন সরিয়ে খালি করার নির্দেশ ছিল, এর আওতায় অ্যাডাম স্পাকর্সের বাড়ির এলাকাটি ছিল না।

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে হারিকেন ফ্লোরেন্সের আঘাতে মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে পাঁচে দাঁড়িয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য নর্থ ক্যারোলাইনার হাজারো ঘরবাড়ি বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গাছপালা উপড়ে পড়েছে। নর্থ ক্যারোলাইনার রাইটস ভিলে সৈকতে ফ্লোরেন্স আঘাত হানে।

ঝড়টি হারিকেন থেকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ে রূপ নেবে বলে সতর্ক করা হলেও আবহাওয়াবিদেরা এখনো এটা প্রাণঘাতী বলে সতর্ক করেছেন। ঝড়ে আরও কয়েক দিন বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঝড়ের পূর্বাভাসের পর ১৭ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।

উইলমিংটনে মা ও সন্তান ছাড়াও লিনয়ের এলাকায় ৭০ বছর বয়সী দুই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর জেনারেটর চালু করতে গিয়ে একজন মারা যান এবং অপরজনের মৃত্যু হয় বাড়ির কুকর কী অবস্থায় আছে, তা দেখতে ঘর থেকে বের হওয়ার পর। এ ছাড়া হ্যাম্পস্টিড এলাকায় এক নারী মারা গেছেন।

ফ্লোরেন্সের প্রভাবে সমুদ্রের পানি উপকূলীয় এলাকার সড়কে চলে আসে। শুরু হয় প্রবল বৃষ্টিপাত। কোথাও কোথাও দেখা দেয় বন্যা।

ঝড়ে বৃষ্টির প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় সাড়ে তিন ফুট উচ্চতায় পানি জমেছে। কোনো কোনো এলাকায় পানির উচ্চতা ১০ ফুট পর্যন্ত হয়েছে। নর্থ ক্যারোলাইনার আট লাখ বাড়িঘর বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ-সংযোগ আবার চালু হতে কয়েক দিন, এমনকি কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। ২০ হাজার বাসিন্দা বিভিন্ন জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। যাঁরা ঝড়ের আগে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে পারেননি, তাঁদের যাঁর যাঁর জায়গায় অবস্থান নিতে বলেছে কর্তৃপক্ষ।

ঝড়টি এখন সাউথ ক্যারোলাইনার পূর্বাঞ্চলের দিকে ধীর গতিতে যাচ্ছে।

এদিকে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ঝড়কবলিত এলাকায় আগামী সপ্তাহে পরিদর্শনে যাবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ মুহূর্তে সেখানে গেলে পরিচ্ছন্নতা ও উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হবে বলে আগামী সপ্তাহে এই পরিদর্শনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।