আরও সুখের প্রত্যাশায় ভুটান

২০০৮ সালে ভুটানে প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: এএফপি
২০০৮ সালে ভুটানে প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: এএফপি

আরও সুখ ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশা নিয়ে ‘বজ্র ড্রাগনের ভূমি’ ভুটানে আজ শনিবার প্রথম দফায় ভোট হয়েছে। এই নিয়ে দেশটিতে তৃতীয় জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে। হিমালয়ের ছোট্ট দেশটির ওপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র ভারত ও চীনের প্রভাব থাকায় নির্বাচনে বিষয়টি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১৮ অক্টোবর ভুটানে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন হবে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য এরই মধ্যে তিন মাসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। দেশটির প্রধান বিচারপতি এই সরকারের প্রধান হিসেবে আছেন। ভুটানে সাধারণত দুই দফায় ভোট হয়ে থাকে। প্রথম দফায় ভোটাররা রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট দেয়। যে দুই দল প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান পায়, তারা পার্লামেন্টের ৪৭টি আসনে প্রার্থী দেয় এবং তখন দ্বিতীয় দফা ভোট হয়। এবারের প্রথম দফা ভোটে চারটি দল অংশ নিচ্ছে। নির্বাচনে সদ্য ক্ষমতা ছাড়া পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) ও প্রথমবার ক্ষমতায় থাকা দ্রুক পুয়েনসাম তসগপা (ডিপিটি) দলের মধ্যে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, এই দুটি দলের মধ্যে পিডিপিকে ভারতপন্থী ও ডিপিটি দেশটির ভারতনির্ভরতা কমিয়ে চীনকে কাছে টানতে ইচ্ছুক। গত নির্বাচনে ডিপিটিকে হারাতে ভুটানে আমদানি করা কেরোসিন ও গ্যাসের ওপর ভর্তুকি বন্ধ করে দেয় ভারত।
এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই নির্বাচনে হার্ভার্ড থেকে পড়াশোনা করা শেরিং তবগের (৫২) দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশা রয়েছে। তবে তাঁর দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (পিডিপি) কঠিন লড়াই করতে হবে দ্রুক পুয়েনসাম তসগপা (ডিপিটি) দলের সঙ্গে। ২০০৮ সালে দলটি ভুটানের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়।
সুইজারল্যান্ডের আকৃতির দেশ ভুটানে বাসিন্দা আট লাখ। ১৯৯৯ সালে দেশটিতে টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু হয়। ২০০৮ সালে দেশটি গণতন্ত্রে প্রবেশ করে। তাও ভুটানের ‘ড্রাগন রাজারা’ তাঁদের একচ্ছত্র ক্ষমতা সমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর।

আধুনিকায়নের কুফল থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখা, গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস নিয়ে লড়াই, কার্বনশূন্য থাকা এবং মৌসুমে পর্যটকপ্রতি মাথাপিছু দৈনিক ফি ২৫০ ডলার নির্ধারণ করে পর্যটকের সংখ্যা কমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে ভুটান। সেখানে স্বাধীন মতামত দেওয়া নিষিদ্ধ। এরপরও একজন বিশ্লেষক এএফপিকে বলেছেন, পিডিপি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ও বেকারত্ব কমিয়ে অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। যদিও দুর্নীতি, গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য, তরুণদের বেকারত্ব এবং অপরাধীদের আধিপত্য এখনো বড় চ্যালেঞ্জ দেশটিতে।

‘দ্য ভুটানিজ ডেইলি’র সম্পাদক তেনজিং লামসাং এএফপিকে বলেন, ‘ আমি মনে করি, ২০০৮ ও ২০১৩-এর প্রধান ইস্যুগুলোই এই নির্বাচনের ইস্যু। অর্থনীতি, গ্রাম উন্নয়ন, অবকাঠামো, কিছু ক্ষেত্রে পর্যটন।’

ভুটান প্রতিবেশী ভারতের ওপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল। চিকিৎসা, অবকাঠামোয় বিনিয়োগ, আমদানি ও রপ্তানির বাজার, বিশেষ করে ভুটানে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ বিক্রির জন্য ভারতের ওপর নির্ভর করতে হয়। ২০১৩ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় ভারত হঠাৎ করে ভুটানে আমদানি করা কেরোসিন ও রান্নার গ্যাসের ওপর ভর্তুকি তুলে নেয়। ভুটানের তৎকালীন সরকার পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে এটাকে ভারতের এক রকমের চেষ্টা বলে ধরা হয়েছিল।
নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি না করলেও ভুটানে ভারতের সামরিক অবস্থান রয়েছে।
ভুটানের ওপর চীনের প্রভাব বাড়তে থাকায় ভারত অখুশি। গত বছর সিকিম-সংলগ্ন এলাকা দোকলামে ভারত ও চীনের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা দেখা দেয়। চীনের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সেখানে সড়ক নির্মাণ করতে বাধা দিচ্ছে ভারত। সেখানের কিছু এলাকা চীন ও ভুটান দুটি দেশই নিজেদের বলে দাবি করেছে।