যান্ত্রিকীকরণে কর্মসংস্থান কমলেও পরে বাড়বে

চীনের কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোয় শিক্ষকের সহকারী হিসেবে কাজ করছে রোবট।
চীনের কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোয় শিক্ষকের সহকারী হিসেবে কাজ করছে রোবট।

যান্ত্রিকীকরণের কারণে বিশ্বে বহু মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে। তবে মানুষের জন্য রোবট হুমকি নয়—এমনটাই মনে করছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এই গবেষণা সংস্থা বলছে, ২০২২ সাল নাগাদ সাড়ে সাত কোটি মানুষের কর্মসংস্থান কেড়ে নেবে রোবট। এই সময়ে মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে প্রায় ১৩ কোটি ৩০ লাখ। অর্থাৎ স্পষ্টত একটি ইতিবাচক বৃদ্ধি।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম মনে করছে, কম্পিউটারে অগ্রগতি নতুন কাজের জন্য কর্মীদের মুক্ত করবে।

বিখ্যাত নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট ‘দাভোস’ পরিচালনা করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। সংস্থাটি বলছে, ‘রোবট ও অ্যালগরিদম থাকা চাকরির উৎপাদনশীলতা বাড়াবে এবং আগামী কয়েক বছরে অনেক নতুনকে নেতৃত্বে এনে দেবে। এতে আমরা পাব আরও তথ্য বিশ্লেষক, সফটওয়্যার ডেভেলপার, সামাজিক মিডিয়া বিশেষজ্ঞ। একই সঙ্গে কাজগুলো হবে স্বতন্ত্র মানববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, যেমন: গ্রাহকসেবাকর্মী ও শিক্ষক।’

তবে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। তারা মনে করছে, কিছু ভূমিকা অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাওয়ার কারণে বড় বড় বাধা আসবে, তবে সাফল্য আসবে ঠিকই। সংস্থাটি বলছে, এই উল্লেখযোগ্য প্রতিস্থাপনের জন্য কর্মীদের নিজেদের কাজের দক্ষতা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া সংস্থাটি এ সময়ে কর্মীদের জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে ‘নিরাপত্তা জাল’ তৈরির পরামর্শ দিয়েছে।

তবে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এমনটা মনে করলেও অনেক গবেষণা সংস্থা এ বিষয়ে এতটা আশাবাদী নয়। তারা বলছে, যান্ত্রিকীকরণের জন্য যেসব কর্মসংস্থান বাদ হবে, সেগুলো আবার প্রতিস্থাপিত হবে—এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।

গত আগস্টে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যান্ডি হ্যালডেন সতর্ক করেন, রোবটের কারণে হাজার হাজার ব্রিটিশ নাগরিক চাকরি হারাতে পারেন। এই চাকরি হারানোর অনুপাত আগের তিনটি শিল্পবিপ্লবে যে পরিমাণ চাকরি হারিয়েছে, এর চেয়ে অবশ্যই বেশি হবে। হ্যানডেল মনে করেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থান উদ্ভাবন করতে হবে।

তবে অন্য সংস্থাগুলো এতটা আশা হারাচ্ছে না। গত জুলাইতে বহুজাতিক কর, নিরীক্ষা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস (পিডব্লিউসি) জানায়, আগামী ২০ বছরে যুক্তরাজ্যে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান কমবে, তার চেয়েও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

২০১৩ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় প্রভাবিত হয়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) গত এপ্রিলে জানায়, আগামী ২০ বছরে যান্ত্রিকীকরণের জন্য যুক্তরাজ্য ৩৫ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্র ৪৭ শতাংশ কর্মসংস্থান বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তবে এই হার কমিয়েছে ওইসিডি। পরে তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ১০ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যের ১২ শতাংশ কর্মসংস্থান ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। কর্মীদের কাজের ধরনে পরিবর্তন আসবে।