ব্রাজিলে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বলসোনারোর বিরুদ্ধে লাখো নারীর 'না'

নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের কারণে ভোটের আগে নারীদের তোপের মুখে পড়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জেইর বলসোনারো। ছবি: এএফপি
নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের কারণে ভোটের আগে নারীদের তোপের মুখে পড়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জেইর বলসোনারো। ছবি: এএফপি

এক নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের কারণে ভোটের আগে নারীদের তোপের মুখে পড়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জেইর বলসোনারো। ৭ অক্টোবর দেশটিতে প্রথম দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। ভোটের আগে অর্ধ কোটি নারী তাঁর বিরুদ্ধে অনলাইনে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। হ্যাশট্যাগ (#NotHim) দিয়ে তাঁকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির তারকাসহ বিভিন্ন স্তরের শ্রেণিপেশার নারীরা। এর মধ্যে দেশটির খ্যাতনামা অভিনয়শিল্পী, সাংবাদিক ও টেলিভিশন উপস্থাপক রয়েছেন। স্থানীয় ভাষায় এই প্রচারকে বলা হচ্ছে #EleNao (#NotHim বা তাঁকে নয়)।

৬ সেপ্টেম্বর নির্বাচনী সমাবেশে ছুরিকাহত হন কট্টর ডানপন্থী দল সোশ্যাল লিবারেল পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জেইর বলসোনারো। এখনো তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ হামলার ঘটনায় ভোটে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। এই মুহূর্তে তাঁর বিরুদ্ধে নারীদের ব্যাপক প্রচার তাঁর জনপ্রিয়তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। কী এমন ঘটেছে যে নারীরা তাঁর ওপর এত খ্যাপা!

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, জেইর বলসোনারো অনলাইনে ব্রাজিলের প্রভাবশালী রাজনীতিকদের একজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম মিলিয়ে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা দেড় কোটির বেশি। বিভিন্ন সময়ে নারী, কালো মানুষ ও সমকামীদের বিরুদ্ধে তিনি মন্তব্য করেছেন। নির্বাচনী সমাবেশে তাঁর ওপর হামলার কারণে ২৮ অক্টোবর চূড়ান্ত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনী জরিপে তাঁর জনপ্রিয়তা ২৮ শতাংশ বেড়েছে বলা হচ্ছে। যদিও বলা হচ্ছে, ওই হামলাটি করেছেন তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরুদ্ধে মানসিকভাবে অসুস্থ এক ব্যক্তি।

ব্রাজিলের এফজিভি ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুসারে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই হ্যাশট্যাগ দিয়ে করা আন্দোলন শুধু ইনস্টাগ্রামে প্রায় দুই লাখবার মেনশন করা হয়েছে। টুইটারে আজ শুক্রবারের মধ্যে মেনশন হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার বার। এর বাইরে #EleNunca (#NeverHim বা তাঁকে কখনো নয়) নামে বলসোনারোর বিরুদ্ধে আরেকটি প্রচার ১ লাখ ৫২ হাজার বার টুইট হয়েছে।

বলসোনারোর বিরুদ্ধে প্রচারে নামা নারীদের দীর্ঘ তালিকায় রয়েছেন অভিনয়শিল্পী, সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপকেরা। দেশটির খ্যাতনামা অভিনয়শিল্পী দেবোরাহ সেকোর ৩৪ লাখ টুইটার অনুসারী আছেন। তিনি বলসোনারোকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে টুইট করেছেন, ‘#EleNao শুধু রাজনীতি নয়। এটা নৈতিকতারও বিষয়’।

জেইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অনলাইনে #EleNao (#NotHim) ক্যাম্পেইন গড়ে তুলেছেন নারীরা।
জেইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অনলাইনে #EleNao (#NotHim) ক্যাম্পেইন গড়ে তুলেছেন নারীরা।

শিশুদের অনুষ্ঠানের কারণে খ্যাতনামা উপস্থাপক জুজা মেনেঘেলের মেয়ে সাশা মেনেঘেল তাঁর ৫০ লাখ অনুসারীর উদ্দেশে ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘যাঁরা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি, তাঁরা মন পরিবর্তন করুন। বলসোনারোকে বেছে নেওয়ার অর্থ হবে বিপজ্জনকভাবে পশ্চাদমুখী হওয়া।’

১০ সেপ্টেম্বর প্রচারিত ডেটাফলহা জরিপে বলা হয়েছে, অভিজ্ঞ কংগ্রেসম্যান বলসোনারোকে ৪৯ শতাংশ নারী ভোটার প্রত্যাখ্যান করেছেন, তবে সমর্থন করেছেন ১৭ শতাংশ।

অনলাইনে বলসোনারোর বিরুদ্ধে প্রচারের ব্যাপারে বিবিসি নিউজ ব্রাজিল তাঁর দলের মন্তব্য জানতে চাইলে তাঁরা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

ব্রাজিলের বামপন্থী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা কংগ্রেস ওমেন মারিয়া দো রোজারিওর সমালোচনা করতে গিয়ে বলসোনারো বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে (মারিয়া) ধর্ষণও করব না, কারণ তুমি তার যোগ্য নও।’ এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তিনি নারী-পুরুষের বেতনবৈষম্য ও নারীর প্রতি বৈষম্যের পক্ষে মন্তব্য করেছেন। ২০১৬ সালে টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি উপস্থাপক লুসিয়ানা গিমেনেজকে বলেছিলেন, তিনি কোনো নারীকে ‘পুরুষের সমান বেতন দিয়ে’ চাকরি দিতে চান না। কারণ নারীরা গর্ভবতী হন। তবে পরে বলসোনারো বলেছিলেন, তিনি এমনটা বলেননি। তাঁর বক্তব্যকে ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। দেশে নারী ও পুরুষকে সমান পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য আইন রয়েছে। আইনটি যথাযথভাবে পালন না হয়ে থাকলে যে কেউ আদালতে যেতে পারেন।

সেনাবাহিনীর সাবেক এই ক্যাপ্টেনের মতে, ব্রাজিলে সামরিক শাসনের সময়ের (১৯৬৪-১৯৮৫) ‘ভুল’ হচ্ছে বামপন্থীদের ‘হত্যা না করে শুধু অত্যাচার করা’। ক্ষমতায় গেলে তিনি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তহবিল বন্ধ করে দেবেন জানিয়ে বলেছেন, ‘মানবাধিকার সংগঠনগুলো ব্রাজিলের জন্য ক্ষতিকর।’ কিছু বক্তব্যের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। বর্ণবাদী বক্তব্যের অভিযোগে ২০১৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। তবে গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে সেই অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছেন।

নিজের কন্যাসন্তান নিয়ে মন্তব্য করেও সমালোচনার শিকার হন বলসোনারো। ২০১৭ সালের এপ্রিলে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার পাঁচ সন্তান। প্রথম চারটি ছেলে। পঞ্চমটি মেয়ে। আমি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম, এর ফলস্বরূপ মেয়ে জন্মেছে।’
তবে অনলাইনে তাঁর বিরুদ্ধে যেমন প্রচারে নেমেছেন নারীরা, তেমনি তাঁর পক্ষেও প্রচার কম নয়। এতে বলসোনারোর দুর্নীতিমুক্ত পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে।