যুক্তরাজ্যের প্রস্তাব নাকচ করে দিল ইইউ

ইইউ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। ছবি: রয়টার্স
ইইউ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। ছবি: রয়টার্স

বিচ্ছেদ পরবর্তী বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাজ্য যে প্রস্তাব করেছে, সেটিকে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইইউ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘কমন রুল বুক’ (সমাননীতি) অনুসরণের যে প্রস্তাব করেছেন, সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ইইউর ‘সিঙ্গেল মার্কেট’ মূলনীতির পরিপন্থী।

অস্ট্রিয়ার সলসবার্গে ইইউর সদস্য দেশগুলোর নেতাদের দুদিনব্যাপী অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে ডোনাল্ড টাস্ক অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন।

ব্রেক্সিট সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করতে সলসবার্গে ২৮টি দেশের সরকারপ্রধানেরা মিলিত হয়েছিলেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সেখানে যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। অন্যদিকে, মে বাদে বাকি ২৭ দেশের নেতারা আলাদাভাবে ব্রেক্সিট বিষয়ে আলোচনা করেন।

ডোনাল্ড টাস্ক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কথা জানিয়ে দেওয়ার পর ব্রেক্সিট আলোচনা কার্যত থমকে গেছে।

আলাদা সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে তাঁর আগের দৃঢ় অবস্থান থেকে নমনীয় হয়ে বলেছেন, তিনি ইইউর উদ্বেগগুলো বিস্তারিত শুনতে চান। তিনি আয়ারল্যান্ড সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নতুন প্রস্তাব দেবেন।

তবে মে স্মরণ করে দিয়ে বলেন, ‘ভুলে গেলে চলবে না, আমরাও চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

‘চেকার্স ডিল’ নামে পরিচিত প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের প্রস্তাব নিয়ে তাঁর নিজ দলেই তুমুল আপত্তি আছে। এই প্রস্তাবকে বেশি উদার ও যুক্তরাজ্যের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী দুজন শীর্ষ মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।

আর বিরোধী দলগুলো প্রস্তাবের সমালোচনা করছে বেশি কঠোর বলে। তাঁরা ব্রেক্সিট বিরোধী।

এখন ইইউ নেতারাও ওই প্রস্তাবে সন্তুষ্ট নন। তাঁরা বলছেন, এটি অকার্যকর।

প্রধানমন্ত্রী মে বলেছিলেন, চেকার্স ডিলই চূড়ান্ত প্রস্তাব, এতে আর নড়চড় হবে না।

এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, সংশোধিত প্রস্তাব ছাড়া সমঝোতাই এগোবে না। এতে ঘরে-বাইরে সবদিক থেকে নতুন করে চাপে পড়লেন থেরেসা মে।

এর আগে বৈঠকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ইইউ নেতাদের বলেন, ব্রেক্সিট বিষয়ে চুক্তি হোক বা না হোক সমঝোতার সময় বাড়াবে না তাঁর দেশ। নির্ধারিত সময়ে আগামী বছরের ২৯ মার্চ বিচ্ছেদ ঘটে যাবে।

আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে নর্দান আয়ারল্যান্ডকে ইইউর ‘সিঙ্গেল মার্কেট’ ও ‘কাস্টমস ইউনিয়ন’-এর অধীনে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী মে ওই প্রস্তাবে আপত্তির কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এক দেশে দুই নিয়ম চালু প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বরং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘কমন রুল বুক’ (সমান নিয়ম) মেনে চলার যে প্রস্তাব যুক্তরাজ্য করেছে, সেটিকেই সর্বোত্তম সমাধান বলে যুক্তি তুলে ধরেন তিনি।

যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দান আয়ারল্যান্ডে শান্তি বজায় রাখতে স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সীমানা উন্মুক্ত রাখার চুক্তি করে ব্রিটিশরা। এটি ‘গুড ফ্রাই ডে অ্যাগ্রিমেন্ট’ নামে পরিচিত।

স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের ইইউর সদস্য। ইইউর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর অভিবাসন ও পণ্যের আদান-প্রদানে ব্রিটিশ সীমান্তে চেকপোস্ট বসবে-এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আয়ারল্যান্ড সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে গেলে সেটি হবে ‘গুড ফ্রাই ডে অ্যাগ্রিমেন্ট’-এর লঙ্ঘন। তা নর্দান আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতার দাবিকে পুনরায় জাগিয়ে তুলতে পারে। ব্রেক্সিট সমঝোতায় এটাই যুক্তরাজ্যের বড় দুর্বলতা।

একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিই কেবল আয়ারল্যান্ড সীমান্তের যোগ্য সমাধান দিতে পারে। যুক্তরাজ্য সেটিই চাইছে। কিন্তু ইইউ তেমন চুক্তিতে নারাজ। কারণ তা অন্যান্য সদস্য দেশকেও জোট ছেড়ে বেরিয়ে যেতে উৎসাহিত করবে।

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে যুক্তরাজ্যের মানুষ ইইউ থেকে বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দেয়। ওই রায় কার্যকর করতে চলছে সমঝোতা। এই বিচ্ছেদ ‘ব্রেক্সিট’ নামে পরিচিত। এখন ইইউর নিয়ম মেনেই যুক্তরাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য চলে, ইইউর সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে শুল্কমুক্ত অবাধ বাণিজ্য করে। কিন্তু বিচ্ছেদের পর এই বাণিজ্য সম্পর্কের কী হবে, সেটি নির্ধারণ নিয়েই চলছে যত নাটকীয়তা।