পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের ঘরে বেসুরো বাঁশি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের অবস্থা এমনিতেই ভালো না। তার ওপর এখন রাজ্য কংগ্রেসের ঘরে বেসুরো বাঁশি বাজতে শুরু করেছে।

গত শুক্রবার অধীর চৌধুরীকে রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর দলের ভেতরে ঝামেলা দেখা দিয়েছে। নতুন সভাপতি সোমেন মিত্রপন্থীরা অধীরপন্থীদের তাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন।

রাজ্যে নিভে যেতে থাকা কংগ্রেসের দীপকে নতুন করে জ্বালাতে সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস কমিটিকে পুনর্গঠিত করেন। তিনি রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব দেন দলের প্রবীণ নেতা সোমেনকে। ২০ বছর আগে রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন তিনি। আর সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সাংসদ অধীরকে।

শুক্রবার নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন সোমেন। বিদায় নেন অধীর। এদিন বিকেলেই সোমেন সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দেন, তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্য কংগ্রেস চালাবেন।

বাম দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার প্রশ্নে সোমেন ইতিবাচক কোনো কথা বলেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় কমিটি যে নির্দেশ দেবে, সেই নির্দেশই পালন করবেন তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় কংগ্রেসের রাজ্য দপ্তরে আয়োজিত সোমেনের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হতে গেলে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি দলীয় নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্রকে।

গত শনিবার রাজ্য কংগ্রেসের মুখপত্র প্রদেশ কংগ্রেস বার্তার সম্পাদক সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে পত্রিকা অফিসে ঢুকতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। সন্ময় প্রদেশ কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এলে তাঁর ওপর চড়াও হন সোমেনপন্থীরা। একপর্যায়ে তাঁকে মারধর করা হয়। পরে অফিসের সামনের সড়কে এসে কোনোমতে বাসে উঠে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন তিনি।

সন্ময় ২০ বছর ধরে পানিহাটি পৌরসভার কাউন্সিলর। তিনি বলেছেন, ৩৫ বছরের রাজনীতিতে এমন ঘটনার সম্মুখীন হননি।

বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অধীরপন্থীরা এখন ভয়ের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন। অধীরপন্থীদের অভিযোগ, এসব ঘটনার ইন্ধন জোগাচ্ছেন সোমেনের ঘনিষ্ঠ নেতা বাদল ভট্টাচার্য। তবে সোমেনপন্থীরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গতকাল রোববার কংগ্রেস কার্যালয়ে হাজির হয়ে সোমেন বলেন, ‘আমি কাঁটার আসনে বসেছি। কাঁটার আসনে বসতে যেমন লাগে, আমার এই আসন তেমনই। ২০ বছর আগে আমি যখন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির পদ ছেড়েছিলাম, তার থেকে এখন অবস্থা আরও কঠিন। তখন এই রাজ্যে বিজেপির এত রমরমা ছিল না। ছিল না সে সময় তৃণমূলের এত আগ্রাসন।’

সোমেন আরও বলেন, ‘সংগঠনটা ক্রমে ভেঙে চলেছে। সেটা সামলিয়ে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এটাই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।’

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান বলেছেন, অধীর বা সোমেন—কারও হাতে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ নেই। তবুও সোমেনের চেষ্টা হবে কংগ্রেসের ভাঙা সংসার জোড়া লাগানো।

সোমেনও বলেছেন, ‘আমরা এক হয়ে লড়লে নিশ্চয়ই কংগ্রেসকে আবার পুনর্জীবন দিতে পারব।’

নতুন কমিটির সঙ্গে বসতে ২৯ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের ডেকেছেন রাহুল গান্ধী। সেখানেই আলোচনা হবে—সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে নতুন কমিটি কীভাবে অগ্রসর হবে।

সোমেন কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মমতা। মমতা রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি পদে দাঁড়িয়ে হেরেছিলেন সোমেনের কাছে। এরপরেই মমতা ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে গঠন করেন তৃণমূল কংগ্রেস। পরে অবশ্য লোকসভা নির্বচনে কংগ্রেস খারাপ ফল করলে দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে সোমেন সভাপতির পদ ছেড়ে দেন।

সোমেন ২০০৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে গঠন করেন প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস। তাতে হালে পানি না পেয়ে ২০০৯ সালে তিনি যোগ দেন তৃণমূলে। একই বছর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে তিনি ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে জয়ী হন। তাঁর ছেড়ে আসা শিয়ালদহের বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন সোমেনের স্ত্রী শিখা মিত্র। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে শিখা ফের জয়ী হন তৃণমূলের টিকিটে। তৃণমূলে যোগ দিয়ে সোমেন যথাযথ সম্মান না পেয়ে ২০১৪ সালে ফের ফিরে আসেন কংগ্রেসে। এরপর রাজনীতিতে অনেকটাই নিশ্চুপ হয়ে যান তিনি।