রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন রুখতে হবে আইনসভাকেই

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিলেন, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন রুখতে সংসদকেই আইন পাস করাতে হবে। ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়েছে, তাঁদের ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার কেড়ে নেওয়া সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এই প্রবণতা রুখতে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলিকে কিছু নির্দেশ দিয়েছে।

বর্তমান আইন অনুযায়ী দু বছরের বেশি সাজা হলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ৭ বছর (যত বছর সাজা তার সঙ্গে আরও ৫ বছর) ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না।

ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ব্যক্তিরা যাতে ভোটে দাঁড়াতে না পারেন সে জন্য ‘পাবলিক ইন্টারেস্ট ফাউন্ডেশন’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করেছিল। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির এজলাসে গতকাল মঙ্গলবার মামলাটির রায় দেওয়া হয়। সংস্থাটির আরজি, রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা অনন্তকাল ধরে চলে। অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের ভোটে লড়া আটকাতে আইনসভাও আইন প্রণয়নের গা করে না। তাই সুপ্রিম কোর্টেরই এগিয়ে আসা উচিত।

প্রধান বিচারপতিসহ বাকি চার বিচারপতি রোহিনটন নরিম্যান, বিচারপতি এ এম খানবিলকর, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি ইন্দু মিশ্র সর্বসম্মতভাবে জানান, অর্থ ও পেশি শক্তির হাত থেকে রাজনীতিকে মুক্ত রাখার দায়িত্ব সংসদের। গণতন্ত্রকে এই মারণ রোগের হাত থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে দেশের সংসদকেই। বিচারপতিরা বলেন, জাতীয় স্বার্থে এমন আইন পাস করা দরকার। গোটা জাতি সেই অপেক্ষায় রয়েছে।

এই মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল। তাঁর বিপক্ষের উকিল ছিলেন তাঁরই পুত্র কৃষ্ণন বেনুগোপাল। অ্যাটর্নি জেনারেলের যুক্তি ছিল, বিচার চূড়ান্তভাবে শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত কেউ দোষী সাব্যস্ত হন না। ফলে অভিযোগপত্র হলেও কারও ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে সংবিধানবিরোধী কাজ। তা ছাড়া, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে অনেক সময়ই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করা হয়ে থাকে।

আইন প্রণয়নের দায়িত্ব সংসদের হলেও সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনকে কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ গঠন হলে তা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামায় স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। রাজনৈতিক দলকেও তা জানাতে হবে ওয়েবসাইটে। সংবাদমাধ্যমকেও অভিযোগপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে হবে প্রার্থীদের, যাতে জনগণ জানতে পারে। শীর্ষ আদালতে জমা দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের হলফনামা অনুযায়ী দেশের মোট সাংসদ-বিধায়কের সংখ্যা ৪ হাজার ৮৯৬। এঁদের মধ্যে ১ হাজার ৭৬৫ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এই জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মোট মামলার সংখ্যা ৩ হাজার ৪৫।