আধার কার্ড বৈধ, তবে বেসরকারি সংস্থা কার্ড দাবি করতে পারবে না

আধার কার্ডের সাংবিধানিক বৈধতা মেনে নিলেও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই পরিচয়পত্রকে সর্বব্যাপী হতে দিলেন না। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ বুধবার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, কোনো বেসরকারি সংস্থা কোনোভাবেই আধার কার্ড দাবি করতে পারবে না। ব্যাংক খাতা খোলা অথবা মোবাইল ফোনের ‘সিম’ নেওয়ার ক্ষেত্রেও আধার কার্ড আবশ্যিক নয়। স্কুলে ভর্তি অথবা সর্বভারতীয় এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে গেলেও এই কার্ড পেশ করা বাধ্যতামূলক হবে না। তবে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছেন, প্যান কার্ড তৈরি ও আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আধার কার্ড দাখিল করতেই হবে।

সর্বোচ্চ আদালত এ কথাও জানিয়েছেন, সরকারি পরিষেবা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে ১২ সংখ্যার এই নাগরিক পরিচিতি সংখ্যা প্রয়োজনীয় হলেও কার্ডে কোনো তথ্যের মিল না থাকার দরুন কাউকে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। বায়োমেট্রিক তথ্য না মিললে অন্যভাবে পরিচয় প্রমাণ করা যাবে। সুপ্রিম কোর্ট এই সঙ্গে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, বেআইনিভাবে যেসব বিদেশি এ দেশে ঢুকেছে, অর্থাৎ অনুপ্রবেশকারীরা, তারা যাতে কোনোভাবেই আধার কার্ড না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে আধার কার্ডে থাকা নাগরিকদের যাবতীয় তথ্য। রক্ষা করতে হবে এর গোপনীয়তা। আধার কার্ডের তথ্যাদি যাতে হাতবদল না হয় নিশ্চিত করতে হবে তা-ও।

সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর সরকার ও বিরোধী দুই পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেছে। যদিও আধার কার্ডকে সর্বব্যাপী ও সর্বগ্রাহ্য করে তুলতে সচেষ্ট কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এটা একটা বড় ধাক্কা।

আধারের মাধ্যমে নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং নাগরিক তথ্যাদি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, এই অভিযোগে শীর্ষ আদালতে মোট ২৭টি মামলা দাখিল হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি এ কে সিক্রি, বিচারপতি এ এম খানবিলকর, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি অশোক ভূষণ ৩৮ দিন শুনানির পর প্রায় দেড় হাজার পৃষ্ঠার যে রায় দেন, তাতে বলা হয়েছে, কোনো বেসরকারি সংস্থাই আধারের তথ্য দাবি জানাতে পারবে না। ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য স্কুল বা কলেজ কর্তৃপক্ষ এই কার্ড দাবি করতে পারবে না, বোর্ডের পরীক্ষা দিতেও আধার কার্ড লাগবে না। বিশ্ববিদ্যালয় অনুদান কমিশনও (ইউজিসি) কোনো বিষয়ে আধারকে বাধ্যতামূলক করতে পারবে না।

পাঁচ বিচারপতির মধ্যে একমাত্র বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় আধার আইনের সঙ্গে সহমত হননি। ভিন্নমত পোষণ করে তিনি বলেছেন, আধার বিল সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস করিয়ে আইন করা হয়েছিল। রাজ্যসভায় পাস করানো হয়নি। বিলটিকে সরকার অর্থ বিলের (যা শুধু মাত্র লোকসভায় পাস করা হয়) মর্যাদা দিয়েছিল। কাজেই আধার আইনটিই অসাংবিধানিক। এই বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় হলো, কোনো বিলকে অর্থ বিলের মর্যাদা দেওয়া হবে তা নির্ভর করে লোকসভার স্পিকারের ওপর। তবে স্পিকারের সেই সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানো যেতে পারে।

দেশের সব নাগরিকের জন্য একটি পরিচয়পত্র তৈরির প্রয়োজনীয়তা প্রথম অনুভব করেছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার। উদ্দেশ্য ছিল, সাধারণ মানুষের ব্যাংক খাতায় যাতে ভর্তুকির টাকা সরাসরি পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের এই সিদ্ধান্তটিই ক্ষমতায় এসে বিজেপি অন্যভাবে ব্যবহার করতে থাকে। ক্রমে ক্রমে বাড়িয়ে দেওয়া হয় আধারের ব্যাপকতা ও বিস্তার। ব্যাংক খাতা খোলা, মোবাইল পরিষেবা, পাসপোর্ট, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ প্রায় সবকিছুতেই সরকার আধার কার্ড পেশ করা বাধ্যতামূলক করে তোলে। সেই সঙ্গে ফাঁস হতে থাকে গোপন নাগরিক তথ্যও। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।