ম্যাখোঁর ম্যাজিক মলিন?

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। ছবি: রয়টার্স
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট পদে প্রধান দুই দলের আধিপত্য চলে আসছিল। গত বছর সেই ধারা ভেঙে রীতিমতো চমক দেখান মধ্যপন্থী ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। কিন্তু ফরাসিদের মাঝে খুব দ্রুতই ম্যাখোঁর ম্যাজিক মলিন হতে বসেছে।

সাবেক এই ব্যাংকার ২০১৭ সালের মে মাসের নির্বাচনে ৬৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেয়ে ফ্রান্সের সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। দ্বিতীয় দফার ভোটে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কট্টর ডানপন্থী মারি লো পেন পান ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট।

হতাশ, ক্ষুব্ধ, বিরক্ত ফরাসি ভোটাররা তরুণ ম্যাখোঁয় আশার আলো দেখেছিলেন। তাই তাঁরা ম্যাখোঁর ওপরই ভরসা রাখেন। ম্যাখোঁও ভোটারদের নতুন দিনের স্বপ্ন দেখান। তিনি বিভেদ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন বলে জানান। দেশকে এক সুতোয় গাঁথার কথা বলেন। ভীতি দূর করে নিরাপদ স্বদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। রাষ্ট্রীয় ব্যয় কমানো, সরকারের দক্ষতা বাড়ানো, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি রোধ, শ্রম আইন শিথিল, বঞ্চিত এলাকায় শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো, বেকারত্ব লাঘব, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, করের বোঝা কমানো, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনসহ নানান আশা–জাগানিয়া অঙ্গীকার করেন।

ম্যাখোঁর মধুচন্দ্রিমা বোধ করি অনেক আগেই কেটে গেছে। ক্ষমতায় বসার মাত্র ১৬ মাসের মাথায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, মুখে বলা যতটা সহজ, বাস্তবে তা করে দেখানো অনেক কঠিন।

প্যারিসের খ্যাতনামা সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিসতোফ দা ভুগদ একটা দারুণ কথা বলেছেন, ফ্রান্স শাসন করা সহজ কাজ নয়।

শুরুর দিকে ম্যাখোঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল। কিন্তু সময় যত যাচ্ছে, তাঁর জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী হচ্ছে। এটা শুধু ধারণাভিত্তিক কথা নয়, জরিপেও একই চিত্র উঠে এসেছে। জরিপকারী সংস্থাগুলো বলছে, ম্যাখোঁর জনপ্রিয়তা এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।

অপিনিয়নওয়ের জরিপ অনুযায়ী, ম্যাখোঁর কাজকর্মে এখন মাত্র ২৮ শতাংশ ফরাসি ভোটার সন্তুষ্ট। গত জুলাইয়ে তা ছিল ৩৫ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর এই পর্যায়ের হিসাবে তিনি তাঁর দুই পূর্বসূরি ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ও নিকোলা সারকোজির চেয়ে বেশি অজনপ্রিয়।

নিজ দেশে ম্যাখোঁর এত দ্রুত অজনপ্রিয় হয়ে পড়ার পেছনে যৌক্তিক কারণও রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, করের বোঝা কমানো, বেকারত্ব লাঘব, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ম্যাখোঁর অনেক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। শুধু কথায় চিড়ে ভেজে না। জনগণ চোখের সামনে ফল দেখতে চায়। প্রত্যক্ষভাবে সুবিধা ভোগ করতে চায়। তবে এখন পর্যন্ত ম্যাখোঁর যা পারফরমেন্স, তাতে ফরাসি জনগণ সন্তুষ্ট নয়।

ফরাসি রাজনীতি ও সরকার পরিচালনায় নতুনত্ব আনার অঙ্গীকার ছিল ম্যাখোঁর। এ ক্ষেত্রেও ভোটাররা হতাশ। পুরোনো ধারাই চলছে। তবে হ্যাঁ, ম্যাখোঁর দায়িত্ব গ্রহণের পর খুব একটা বেশি সময় পার হয়ে যায়নি। আর হুট করে একটা সংস্কৃতিও আমূল বদলে ফেলা যায় না।

সবচেয়ে বড় কথা, ম্যাখোঁ সম্পর্কে ইতিমধ্যে নেতিবাচক ‘পাবলিক পারসেপশন’ তৈরি হয়ে গেছে। জনগণ ভাবতে শুরু করেছে, তাদের প্রেসিডেন্ট উদ্ধত, জনবিচ্ছিন্ন, কর্তব্যপরায়ণ।

এ কথা সত্যি, বেশ অল্প সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের উজ্জ্বল তারা হয়ে উঠেছেন ম্যাখোঁ। কিন্তু দেশে তাঁর অবস্থা ক্রমেই মলিন আলো দিতে থাকা বাতির মতো।