ইন্দোনেশিয়ায় খাবার ও পানির জন্য হাহাকার

শহরজুড়ে খাবার, পানি ও জ্বালানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ছবি: এএফপি
শহরজুড়ে খাবার, পানি ও জ্বালানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ছবি: এএফপি

ইন্দোনেশিয়ার পালু শহরে ভূমিকম্প ও সুনামিতে মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে আজ বুধবার ১ হাজার ৪০০–তে পৌঁছেছে। সময় যত গড়াচ্ছে, মৃত মানুষের সংখ্যা তত বাড়ছে। এক দিনে মৃত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০০ বেড়েছে। শহরে পাহাড়ের উপরিভাগে ১ হাজার ৩০০ মরদেহ সমাহিত করার জন্য গণকবর খোঁড়া হয়েছিল। শহরজুড়ে ভয়াবহ খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। খাবারের জন্য বেপরোয়া লোকজন দোকানপাটে লুটতরাজ শুরু করেছে। বুভুক্ষুরা করছে হাহাকার।

আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, সুলাওয়েসি দ্বীপের পালু শহরে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং ভূমিকম্পের পর সুনামির ফলে সৃষ্ট ২০ ফুট উঁচু ঢেউয়ে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ পর্যন্ত মৃত মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০–তে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার মৃত মানুষের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২০০।

খাবার, পানি ও জ্বালানির জন্য দোকানপাট লুট করা থেকে রক্ষা করতে পুলিশ পাহারা দেওয়া শুরু করেছে।

পুলিশের উপপ্রধান আরি দোনো সুকমানতো বলেছেন, শুরুতে ভুক্তভোগীদের খাবার লুট করার বিষয়টি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেছিল পুলিশ। কিন্তু কিছু মানুষ কম্পিউটার ও নগদ অর্থ লুট করছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় দিন থেকে খাবার সরবরাহ শুরু হয়েছে। এখন তা শুধু বিলানো হবে। এখন আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করেছি।’

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নিয়ে আসা ত্রাণ সেনা ও পুলিশ পাহারায় শহরে ঢোকানো হচ্ছে।

এখনো ধ্বংসস্তূপে লোকজন আটকে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খাবার পেতে মরিয়া লোকজন দোকান লুট করছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
খাবার পেতে মরিয়া লোকজন দোকান লুট করছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, পালু শহরে যাঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকের পরিবারের জন্য ন্যূনতম খাবার জোগাড়ের চেষ্টায় ছিলেন। শহরের স্বাভাবিক সব সেবাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ, খাবার ও পানি খুব কমই পাওয়া যাচ্ছে। খাবারের জন্য লোকজন ব্যাকুল।

একটি দোকানের সামনে সশস্ত্র পুলিশ পাহারা দিচ্ছিল। হঠাৎ করে লোকজন দোকানের ভেতরে ঢোকার জন্য ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে পুলিশ চিৎকার করে সবাইকে পিছু হটতে বলে। ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। কিছু মানুষ পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ে মারছিল। কিছু সময়ের জন্য মনে হচ্ছিল, পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়ে উঠবে। প্রায় এক ঘণ্টা পর পুলিশই পিছু হঠে এবং লোকজনকে দোকানের ভেতর ঢুকতে দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ক্ষোভের পরিবর্তে উল্লাস করতে করতে লোকজন দোকানের ভেতর ঢুকে যায়। যেসব লোক খাবার ছাড়া অন্য জিনিস নিয়ে যাচ্ছিল, তাদের পুলিশ বাধা দেয়।

একজন পুলিশ বিবিসি প্রতিবেদককে জানান, তাঁর দায়িত্ব দোকানটি রক্ষা করা। কিন্তু তিনি কী করবেন, যখন মানুষের এই রকম প্রয়োজন দেখা দিয়েছে?

উইউইদ নামের ৪৪ বছর বয়সী একজন খাবার বিক্রেতা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘দুদিন ধরে আমি কিছু খাইনি, সামান্য একটু পানি খেয়েছি মাত্র।’

পালু শহরের হোটেল রোয়া-রোয়ার ধ্বংসস্তূপে অনেকে আটকে পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
পালু শহরের হোটেল রোয়া-রোয়ার ধ্বংসস্তূপে অনেকে আটকে পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় জানিয়েছে, পালুতে দুই লাখ মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। এর মধ্যে এক–চতুর্থাংশ শিশু। গতকাল মঙ্গলবার ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, তারা জরুরি সহায়তা দিয়ে একটি এয়ারক্র্যাফট পাঠাচ্ছে।

ধ্বংসস্তূপের ভেতর এখনো অনেকে আটকে আছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। শহরের জোনুজ গির্জার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বাইবেল ক্যাম্পে অংশ নেওয়া ৮৬ শিশুর মধ্যে ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ৫২ জনের এখনো কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ভূমিকম্পের সময় রোয়া-রোয়া হোটেলে ৫০ জন ছিলেন। এর মধ্যে তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে। নয়জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। অন্যদের ব্যাপারে এখনো কিছু জানা যায়নি।