অনন্য সাহসিকা নাদিয়া

নাদিয়া মুরাদ। ছবি: রয়টার্স
নাদিয়া মুরাদ। ছবি: রয়টার্স

সাহসী মানুষের জয় সব সময়। এবারের শান্তিতে নোবেলজয়ী নাদিয়া মুরাদ তেমনই এক সাহসিকা। নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে যে সাহসের দরকার, সেটাই বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন একটি সম্প্রদায়ের মুক্তির ঢাল।

মাত্র ২৫ বছর বয়সী নাদিয়ার ঘাড়ে এসে পড়েছে দাসত্ব-নির্যাতিত মানুষের হয়ে কথা বলার আর লড়াই করার গুরুদায়িত্ব। সে দায়িত্ব তিনি সাহসের সঙ্গেই পালন করে যাচ্ছেন। পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাইয়ের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার চার বছর পর আবারও তাই শান্তিতে নোবেল পেলেন আরও এক নারী। নোবেল কমিটি বলছে, যুদ্ধকালে ও সশস্ত্র সংগ্রামের সময় যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে অবদান রাখায় নাদিয়া মুরাদকে এবারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইয়াজিদি নারী নাদিয়া মুরাদ জঙ্গি হামলার প্রত্যক্ষ শিকার। পরে তিনি ইয়াজিদিদের মুক্তির প্রতীকে পরিণত হন। ইরাকে যুদ্ধ চলার সময় নাদিয়া মুরাদকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা তিন মাস আটকে রাখে এবং যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করে। এ সময় তাঁর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয় এবং যৌনদাসী হিসেবে বেশ কয়েকবার তাঁকে বিক্রি করা হয়। ২০১৪ সালের নভেম্বরে আইএসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নাদিয়া মুরাদ ইয়াজিদি জনগণের মুক্তির আন্দোলনে শামিল হন। তিনি মানব পাচারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। ধর্ষণকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলে কঠোর শাস্তির দাবি জানাতে থাকেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নির্যাতন-নিপীড়ন নাদিয়া মুরাদকে দমাতে পারেনি। তিনি সাহস দেখিয়েছেন। সাংবাদিকদের সামনে বলেছেন, তিনি চুপ করে থাকতে চান না। বিশ্ববাসী তাঁর নাম জানুক, তিনি বিশ্ববাসীকে নির্যাতনের কথা শোনাতে চান। তাঁর ছবি প্রকাশ হলেও তিনি কুণ্ঠিত হন।

নাদিয়া মুরাদ তাঁর ওপর ঘটে যাওয়া নির্মমতার কাহিনি বিশ্ববাসীকে বলেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে গেছেন, যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে গেছেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গেছেন এবং নিজের কথা বলেছেন। উত্তর ইরাকের ইয়াজিদিদের মুক্তির কথা তিনি প্রচার করছেন।

গতকাল শুক্রবার নোবেল কমিটি নাদিয়া মুরাদ সম্পর্কে বলেছে, তিনি অসাধারণ সাহস দেখিয়েছেন। নিজের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছেন। অন্যান্য নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন।

আইএসের হাতে তিন মাস বন্দী ছিলেন নাদিয়া। নিজের জীবনের এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা জানাতে ‘দ্য লাস্ট গার্ল’ নামের একটি বই লেখেন নাদিয়া, যা ২০১৭ সালে প্রকাশ পায়।

নাদিয়া বলেছেন, ২০১৪ সালে আইএস জঙ্গিরা ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এই এলাকায় ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। আইএসের জঙ্গিরা ওই এলাকায় নারীসহ হাজার হাজার মানুষকে অপহরণ ও হত্যা করে। যেসব তরুণী ও নারীকে তারা অপহরণ করে, তাঁদের যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি ও ব্যবহার করে জঙ্গিরা। এখনো সেখানে অনেকেই যৌনদাসী হিসেবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

নাদিয়া বলেন, ‘এখনো নয় বছর বয়স থেকে মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের ভাগ্যে কী ঘটছে তা অজানা। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি, ভয়াবহ এক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শিশুরা। তাদের রক্ষা করতে চাই আমি।’

জার্মানির একটি শরণার্থী প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সালে আরও এক হাজার নারী ও শিশুর সঙ্গে জার্মানি পাড়ি জমান নাদিয়া। বর্তমানে সেখানেই তিনি বসবাস করছেন। বর্তমানে জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন তিনি। মানবাধিকার–বিষয়ক আইনজীবী আমাল ক্লুনির সঙ্গে আইএস জঙ্গিদের হাতে বন্দী ইয়াজিদি নারী ও যাঁরা পালিয়ে এসেছেন, তাঁদের নিয়েও কাজ করছেন তিনি। মানবাধিকারকর্মী আবিদ সামদিনকে (৩০) বিয়ে করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

সামদিন বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে পরিবার নিয়ে একসঙ্গে জীবনযাপন করা। কিন্তু আমরা একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে চাই এবং পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত ইয়াজিদিদের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যেতে চাই।’