দুর্গাপূজায় সরকারি অনুদান, কলকাতা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ

কলকাতা হাইকোর্ট। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
কলকাতা হাইকোর্ট। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার দুর্গাপূজায় ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দের যে ঘোষণা দিয়েছিল, তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন রাজ্যের হাইকোর্ট। গতকাল শুক্রবার এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার দুর্গাপুজোয় রাজ্যের ২৮ হাজার সর্বজনীন পুজো কমিটিকে ১০ হাজার রুপি করে ২৮ কোটি রুপি অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন গত মাসে।

এ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়ে এই সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে কলকাতার যুক্তিবাদী আন্দোলনের কর্মী সৌরভ দত্ত ও দ্যুতিমান বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। তাঁরা অবিলম্বে ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করার আবেদন জানান। সেই মামলার শুনানি শেষে গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশীষ করগুপ্ত ও বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ এক নির্দেশে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারের ওই সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিনও ধার্য করে।

হাইকোর্টে এই মামলা দায়েরের আগে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন আরএসপি নেতা অশোক ঘোষ।

গতকাল এই মামলার শুনানির সময় আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, সরকার জনগণের টাকা এভাবে বিলি করতে পারে না। বিশেষ একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎসবে এভাবে অনুদান দিলে তা সরাসরি দেশের সংবিধানকে আঘাত করা হয়।

এদিকে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলে বলেছে, মুখ্যমন্ত্রী তো এত দিন রাজ্যে আর্থিক সংকটের কথা বলে আসছেন। সাবেক বামফ্রন্ট সরকারের ঋণের বোঝা বহন করে যেতে হচ্ছে। সেতু ভেঙে পড়লেও আর্থিক সংকটের কারণে রাজ্যের বিভিন্ন সেতু ও উড়ালসেতুর সংস্কার করতে পারছে না, সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এত অভাব থাকা সত্ত্বেও কীভাবে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি তহবিল থেকে ২৮ কোটি রুপি অনুদান দিচ্ছেন? এটা তো আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের প্রচার ছাড়া আর কিছু নয় ? প্রশ্ন তুলেছে, মমতা কীভাবে এই ২৮ কোটি রুপি সরকারি অর্থ অনুদান দিতে পারেন রাজ্যর পুজা কমিটিগুলোকে?

বাম দল আরএসপির শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসির সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ মমতার অনুদান দেওয়ার ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, কোনো ধর্মীয় উৎসব আয়োজনে সরকারি অর্থ দেওয়া সংবিধানে বর্ণিত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকাঠামোকে লঙ্ঘন করে। প্রয়োজনীয় জনস্বার্থের কাজে অর্থ বরাদ্দ না করে ২৮ হাজার পুজো কমিটিকে কেন ২৮ কোটি রুপি দেওয়া হবে?

এদিকে সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কাউর এবং রাজ্য সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরীও অভিযোগ তুলে বলেছেন, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আটকে রয়েছে। অথচ পুজোয় সরকারি অর্থ অনুদান হিসেবে দেওয়া হচ্ছে ২৮ কোটি রুপি।