পাকিস্তানের যে শহরে হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই

পাকিস্তানে করাচির কাছে শ্রীকৃষ্ণমন্দিরে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানে করাচির কাছে শ্রীকৃষ্ণমন্দিরে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের একটি এলাকার নাম মিঠি। এখানে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস। মিঠিতে হিন্দু অধিবাসীর সংখ্যা ৬০ হাজার। হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায় এখানে ভাই ভাই।

শ্যাম দাসের বয়স ৭২। বললেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ হিন্দু এলাকায় গোহত্যা করে না। পাকিস্তানের অন্যান্য এলাকার তুলনায় মিঠিতে গরু বেশ নিরাপদ। গরুগুলো এখানে নিশ্চিন্তে খায়দায়। রাস্তার ধারে ঘুমায়। এমনকি যানবাহনও তাদের ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় থাকে।

পাকিস্তানে ৯৫ শতাংশ নাগরিক মুসলিম। মিঠিতে ৬০ হাজার হিন্দু রয়েছে। রয়েছে শ্রীকৃষ্ণমন্দির। হিন্দুধর্মাবলম্বীরা মন্দিরে ঘণ্টা বাজায়। ঘণ্টার শব্দ মিশে যায় আজানের ধ্বনির সঙ্গে।

করাচি থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে মিঠি শহরের অবস্থান। মিঠিকে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়। করাচির পুরোহিত বিজয় কুমার গির বলেন, মিঠিতে ৩৬০টি মন্দির রয়েছে। ১২টি মন্দির সচল। বাকি মন্দিরগুলো বন্ধ। এসব মন্দিরের জমি বেআইনি।

মিঠির একটি মসজিদ। ছবি: এএফপি
মিঠির একটি মসজিদ। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের (এইচআরসিপি) কর্মকর্তা মারভি সারমেড বলেন, পাকিস্তানে হিন্দুদের সাধারণত সন্দেহের চোখে দেখা হয়। হিন্দুরা এখানে নিজেদের নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে থাকে। কিন্তু মিঠির পরিস্থিতি অন্য রকম।

এইচআরসিপির মতে, এলাকার ধর্মীয় নেতাদের কারণে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বেশি বৈষম্য থাকে। তবে মিঠিতে এসবের কোনো প্রভাব পড়েনি। এখানে হিন্দু ও মুসলিমরা মিলেমিশে থাকে। নিজেদের ধর্মীয় উৎসবে একে অন্যকে মিষ্টি ও অন্যান্য উপহার দেয়।

৩৫ বছরের ব্যবসায়ী সুনীল কুমার বলেন, মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে তিনি বেড়ে উঠেছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে এই মৈত্রী ও ভালোবাসার ধারাবাহিকতা রয়েছে।

মিঠির শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ভৌগোলিক অবস্থানও প্রভাব ফেলেছে। ভারতের রাজস্থানের কাছে থারপারকার মরুভূমিতে অবস্থিত মিঠি। স্থানীয় অধিবাসীরা বলেন, ১৬ শতকের শুরুতে শান্তিকামী হিন্দু সম্প্রদায় এই শহর গড়ে তোলে। মিঠির মাটি উর্বর নয়। সহজে পানি ঢুকতে পারে না।

মিঠির ইমাম আল্লাহ জুরিও বলেন, তাঁদের এলাকা খুব কম অপরাধপ্রবণ। তবে পাকিস্তানে ধর্মীয় উগ্রবাদ বাড়ছে। ধর্মীয় সহিংসতা বাড়ছে। এইচআরসিপির আশঙ্কা, এসব কারণে শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় অবস্থান নাও থাকতে পারে।

মিঠির বাসিন্দা কমপিউটারবিজ্ঞানী চন্দর কুমার (২৪) বলেন, মিঠির বাসিন্দাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। তবে বাইরের বিভিন্ন হস্তক্ষেপে মিঠিতে বৈষম্য দেখা দিতে পারে। জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত জঙ্গি দল জামাত-ই-দোয়া মিঠিতে সক্রিয় বলে অভিযোগ আছে। তারা মিঠির হিন্দু-মুসলিমদের সম্প্রীতিতে ভাঙন ধরাতে চায়।