আম্বানিদের পকেট ভরাতে মরিয়া মোদি?

রাহুল গান্ধী, অনিল আম্বানি ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এএফপি ও রয়টার্স
রাহুল গান্ধী, অনিল আম্বানি ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এএফপি ও রয়টার্স

ফরাসি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান রাফায়েল কেনা নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে ভারতে। আগামী বছরে অনুষ্ঠিতব্য লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে রাফায়েল চুক্তিকেই প্রধান অস্ত্র বানাতে চাইছে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস। দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের তির নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের দিকে। আর বিতর্কের আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ!

অভিযোগ উঠেছে, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনাকাটার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ভেঙে ফ্রান্সের কাছ থেকে ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কিনছে মোদির সরকার। অর্থমূল্যের দিক থেকে এই কেনাকাটা প্রায় ৫৯ হাজার কোটি রুপির। কংগ্রেস আপত্তি তুলে বলেছে, তাদের সময়ে করা চুক্তিতে ১২৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছিল। ওই সময় প্রতিটি যুদ্ধবিমানের পেছনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের হিসাব ছিল, তার তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি অর্থ খরচ করছে মোদির সরকার! আর বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী, এই পুরো কেনাকাটার ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্টনার হিসেবে থাকছে অনিল আম্বানির রিলায়েন্স গোষ্ঠী। অথচ অনিলের সংশ্লিষ্ট সেই কোম্পানির প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত কাজের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই!

ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনাকাটায় ভারত-ফ্রান্সের দেওয়া যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার মাত্র ১২ দিন আগে অনিল আম্বানির কোম্পানি নিবন্ধিত হয়েছিল। অর্থাৎ নিবন্ধিত হওয়ার দিন কয়েকের মাথায় একেবারে অনভিজ্ঞ একটি কোম্পানিকে দেশের প্রতিরক্ষা কেনাকাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ফেলা হয়। অথচ জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট এসব কেনাকাটায় এত দিন গুরুত্ব পেত সরকারি সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনেটিকস লিমিটেড (এইচএএল)। প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত বিষয়াদি সরকারের হাতে রাখাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এবার সেই সংস্থা অনিল আম্বানির প্রতিষ্ঠানের কাছে পাত্তাই পায়নি।

ওপরের সবটুকুই ‘বিরোধীদের প্রোপাগান্ডা’ বলে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল নরেন্দ্র মোদির। তাঁর দল বিজেপি সেই কৌশলই নিয়েছিল। কিন্তু বাদ সাধলেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ফরাসি সংবাদ সংস্থা মিডিয়াপার্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বোমা ফাটান ওলাঁদ। তিনি বলেন, ভারত সরকারই অনিল আম্বানির প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাব করেছিল। আর তাতে ফরাসি পক্ষের দ্বিমত করার সুযোগ ছিল না। অর্থাৎ ওলাঁদের দাবি অনুযায়ী, শুধু ভারত সরকারের প্রস্তাবেই অনিল আম্বানির রিলায়েন্স রাফায়েল চুক্তিতে জড়িয়েছে।

অবশ্য ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদও ধোয়া তুলসীপাতা নন। ফরাসি সংবাদ সংস্থা মিডিয়াপার্ট বলছে, রাফায়েল চুক্তিতে সম্পৃক্ত হওয়াকে সামনে রেখে ২০১৬ সালে ওলাঁদের অভিনেত্রী স্ত্রী জুলি গিয়াইয়ের সিনেমায় ১৬ লাখ ইউরো বিনিয়োগ করেছিল অনিল আম্বানির মালিকানাধীন আরেক কোম্পানি রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেড। এ নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই ভারত সরকারের ওপর সব দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এসব ঘটনায় একটি বিষয় স্পষ্ট যে অনিল আম্বানির হাত অনেক ওপর পর্যন্তই গেছে!

রাফায়েল যুদ্ধবিমান। ছবি: রয়টার্স
রাফায়েল যুদ্ধবিমান। ছবি: রয়টার্স

রাফায়েল-বৃত্তান্ত
রাফায়েল যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা এবং ভারতীয় বিমানবাহিনীতে এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশটির বিমানবাহিনীকে আধুনিক করতে চাইলে রাফায়েল যুদ্ধবিমানের বিকল্প নেই। ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্তারা এই যুদ্ধবিমান কেনার পরামর্শ দিয়েছেন অনেক দিন হলো। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, দুই ইঞ্জিনের রাফায়েল আকাশে এবং আকাশ থেকে মাটিতে হামলা চালাতে সক্ষম। এটি পারমাণবিক হামলা চালাতে পারে এবং প্রয়োজনে বিপক্ষের রাডারকে ফাঁকি দিতে পারে।

২০১২ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকার ফ্রান্সের দঁসু অ্যাভিয়েশনের কাছ থেকে ১২৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল। তখন বলা হয়েছিল, এর মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ওড়ার উপযোগী করে ১৮টি যুদ্ধবিমান সরবরাহ করা হবে। অন্যদিকে, বাকি ১০৮টি যুদ্ধবিমান ভারতে তৈরি করার কথা ছিল। তৈরি বলতে যন্ত্রাংশগুলো সংযুক্ত করা (অ্যাসেম্বল) হবে। আর সেই কাজটির দায়িত্ব পড়েছিল রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনেটিকস লিমিটেডের ঘাড়ে। ওই সময় একেকটি যুদ্ধবিমান কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫২৬ কোটি রুপি।

ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। তাঁর দাবি, ভারত সরকারের প্রস্তাব মেনেই অনিল আম্বানির কোম্পানিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ছবি: এএফপি
ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। তাঁর দাবি, ভারত সরকারের প্রস্তাব মেনেই অনিল আম্বানির কোম্পানিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ছবি: এএফপি

এরপর বদলে যায় ভারতের রাজনৈতিক দৃশ্যপট। কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জোট। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন আসে প্রতিরক্ষা কেনাকাটাতেও। ২০১৫ সালের এপ্রিলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার ঘোষণা দেন। ১২৬টি যুদ্ধবিমান কেনার পূর্ববর্তী সরকারের নেওয়া পরিকল্পনা থেকে সরে আসেন মোদি। বলা হয়, এই ৩৬টি যুদ্ধবিমানই ওড়ার উপযোগী থাকবে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এসব যুদ্ধবিমান সরবরাহ শুরু হবে, শেষ হবে ২০২২ সালে। নিজের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগকেও পাশে সরিয়ে রাখেন মোদি। দঁসু অ্যাভিয়েশনের কাছ থেকে রাফায়েল যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তি শিখে তা দেশীয়ভাবে প্রয়োগ করার চিন্তাও বাদ দেওয়া হয়। আর এবার একেকটি যুদ্ধবিমানের পেছনে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৬৭১ কোটি রুপি।

এভাবে রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার ঘোষণা দেওয়ার পরই কংগ্রেস দুর্নীতির অভিযোগ আনে শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে। কিন্তু পাত্তা দেননি মোদি। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ভারত সরকার ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে। প্রতিরক্ষা কেনাকাটার ক্ষেত্রে ‘অফসাইট নীতি’ অনুসরণ করে ভারত। স্ক্রল ডট ইনের খবরে বলা হয়েছে, রাফায়েল চুক্তির অফসাইট মূল্য ৫৯ হাজার কোটি রুপির প্রায় অর্ধেক। অফসাইট নীতি অনুযায়ী, ভারত যাদের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনাকাটা করবে, তাদের ভারতে কিছু সেবা দিতে হবে। মূলত, ভারতের স্থানীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতেই এই নীতি।

ঠিক এই সুযোগই কাজে লাগায় অনিল আম্বানির কোম্পানি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্টনার নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ পকেটে ঢোকানোর দ্বারপ্রান্তে প্রতিষ্ঠানটি। রাফায়েলের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দঁসু অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে যৌথ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে রিলায়েন্স। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কোম্পানির লাভের মুখ দেখতে পেরিয়ে যেতে পারে এক দশক!

রাফায়েল চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির তোপ দেগেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিকের অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ এনেছেন তিনি। ছবি: রয়টার্স
রাফায়েল চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির তোপ দেগেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিকের অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ এনেছেন তিনি। ছবি: রয়টার্স

বিতর্ক যা নিয়ে
রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। পাল্টা জবাবে বিজেপি জানায়, যুদ্ধবিমানে নতুন ও আধুনিক অস্ত্র সংযুক্ত করা হয়েছে। এতেই খরচ বেড়েছে। এত দিন মোদির সরকার বলে আসছিল, অনিল আম্বানির কোম্পানির নাম সরকার প্রস্তাব করেনি। প্রতিরক্ষা কেনাকাটায় অনিলের উপস্থিতির ব্যাপারে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ কিছুদিন আগেও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘দুই সরকারের মধ্যকার চুক্তিতে আমি তাঁর (অনিলের) বা অন্য কারও নাম প্রস্তাব করিনি। কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে চুক্তি করার কথাও আমি বলিনি।’

কিন্তু ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের বক্তব্যের পর এগুলো অসার হয়ে যাচ্ছে। ওলাঁদ স্পষ্ট করেই বলেছেন, ভারত সরকারের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতেই অনিল আম্বানির কোম্পানি নির্বাচিত হয়েছে। এর সঙ্গে ওলাঁদের স্ত্রীর চলচ্চিত্রে অনিলের অর্থ বিনিয়োগের অভিযোগটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে সাবেক প্রেসিডেন্টের স্ত্রীর প্রতিষ্ঠান ও রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট—উভয়েই এই অভিযোগ এখন অস্বীকার করেছে। মজার বিষয় হলো, ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি এই চলচ্চিত্রে বিনিয়োগের বিষয়টি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিশ্চিত করেছিল রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট! এর দুই দিন পরই রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে এসেছিলেন ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। আর দুই দেশের সরকারের মধ্যে রাফায়েল চুক্তি হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে।

ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে ওপরের ঘটনাটিকে ক্রনি ক্যাপিটালিজমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ বলে উল্লেখ করা হয়। রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ধনী হওয়ার উপায়কেই বলা হয় ক্রনি ক্যাপিটালিজম। বলা হচ্ছে, ওলাঁদের কাছ থেকে সমর্থন না পেলে রিলায়েন্সের এমন কাজ করার কথা নয়।

অনিল আম্বানির কোম্পানির প্রতিরক্ষা খাতসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতার ঝুলি প্রায় শূন্য। এর ওপর আছে দেনার বোঝা। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই টেনে তুলছেন অনিলকে? ছবি: রয়টার্স
অনিল আম্বানির কোম্পানির প্রতিরক্ষা খাতসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতার ঝুলি প্রায় শূন্য। এর ওপর আছে দেনার বোঝা। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই টেনে তুলছেন অনিলকে? ছবি: রয়টার্স

কংগ্রেসের অন্যতম অভিযোগ হলো, প্রতিরক্ষা কেনাকাটার যথার্থ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি মোদি। স্ক্রল ডট ইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যারিসে গিয়ে রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার ঘোষণা দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন না তৎকালীন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর। এর এক বছর পর, ২০১৬ সালের জুনে পার্লামেন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে মনোহর পারিকর জানান, রাফায়েল চুক্তির বিস্তারিত জানেন না তিনি! এখন কেউ যদি রাফায়েল চুক্তির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাকে কি ভুল বলা যাবে?

এদিকে কংগ্রেসের আপত্তি ও বিরোধিতার মুখে পড়েও রাফায়েল চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করতে অপারগতা জানিয়েছে মোদির সরকার। বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে এই চুক্তির বিস্তারিত জানানো সম্ভব নয়। এমনকি রাফায়েল কেনাকাটা নিয়েও সবিস্তারে বলতে মানা! বিষয়টিই নিন্দুকদের আরও সুবিধা এনে দিয়েছে। অনেকে গোপনীয়তার এই নীতিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করছেন।

এদিকে সংশ্লিষ্ট খাতে অনিল আম্বানির কোম্পানির অভিজ্ঞতার ঝুলি প্রায় শূন্য বললেই চলে। রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাদ দিয়ে এমন একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিকে কেন বেছে নেওয়া হলো, সেই প্রশ্নকে অহেতুক প্রমাণ করার সুযোগ নেই। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, অনিলের রিলায়েন্স গ্রুপ দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে আছে। বাজারের এই গোষ্ঠীর দেনা প্রায় ৪৫ হাজার কোটি রুপির মতো। তবে কি মোদিই টেনে তুলছেন অনিলকে?

ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পারলির (ডানে) সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে হাস্যোজ্জ্বল অনিল আম্বানি। ছবি: এএফপি
ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পারলির (ডানে) সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে হাস্যোজ্জ্বল অনিল আম্বানি। ছবি: এএফপি

রাজনীতিতে ফায়দা লুটবেন মোদি নাকি রাহুল?
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার রাফায়েল কেনাকাটায় যে নীতি নিয়েছিল, তাতে জড়িত ছিল মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স গ্রুপ। অনিলের ভাই হলেন মুকেশ। ফোর্বস ম্যাগাজিনের এ বছরের হিসাবে ভারতের শীর্ষ ধনী এই মুকেশ আম্বানি। বাবার মৃত্যুর পর দুই ভাইয়ের মধ্যে ব্যবসা ভাগ হয়ে যায়। এরপর মুকেশ প্রতিরক্ষা খাত থেকে সরে যান। এখন সেখানেই জায়গা পোক্ত করার চেষ্টা করছেন অনিল। কিন্তু মুকেশ শীর্ষে উঠলেও তলানিতে নামছেন অনিল।

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এরই মধ্যে আওয়াজ তুলেছেন যে দেশের চৌকিদার (মোদি) নাকি চোর! কংগ্রেস ভাবছে, রাফায়েল দিয়েই ঘায়েল করা যাবে বিজেপিকে। কিন্তু বিশ্লেষকদের মত, হিসাব এত সহজ নয়। ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপের করা সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, এখনো ভারতের অধিকাংশ নাগরিক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদিকেই চান।

মোদির জনপ্রিয়তা মাথায় রেখে বিজেপির ভাষ্য, মোদিকে চোর বলে রাহুল নিজেই কৌশলগত ভুল করছেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমানে রাফায়েল বিতর্কে সবচেয়ে বেশি প্যাঁচে পড়েছেন অনিল আম্বানি। যে খড়কুটো আঁকড়ে ধরে কোম্পানির ভাঙা তরি তিনি ভাসাতে চেয়েছিলেন, তাতেই ডুবছেন তিনি। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে রাফায়েল চুক্তির স্বচ্ছতার অভাব যে কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধীদের বাড়তি সুবিধা দেবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এরই মধ্যে রাফায়েল চুক্তি আদালতে গড়িয়েছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে দুটি আরজি পেশ করা হয়েছে। একটিতে রাফায়েল চুক্তি স্থগিত করার আবেদন জানানো হয়েছে। অন্যটিতে সরকারের কাছ থেকে চুক্তির বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। গতকাল বুধবার এ নিয়ে আদালতে শুনানি হয়। রাফায়েল চুক্তি–সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তগুলোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন আদালত। বিচারিক হস্তক্ষেপ রাফায়েল বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।